• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শতাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শঙ্কায় আওয়ামী লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৯, ২০২০, ০৬:৫২ পিএম
তিন শতাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শঙ্কায় আওয়ামী লীগ

ঢাকা : আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেউ ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হলে ‘কঠোর সাংগঠনিক’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল দলটি। এসব ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কারের কথাও জানিয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা।

এছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেও নির্দেশ এসেছে। এরপরও দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে দলের ‘বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী’ হিসেবে তিন শতাধিক নেতা এখনো সক্রিয়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সব ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন কি না, শেষ পর্যন্ত কতজন ভোটের মাঠে ‘দলের প্রার্থীর’ বিরুদ্ধে রয়ে যাবেন, এসব বিষয় আজ জানা যাবে।

সূত্রমতে, গত ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ মুলতবি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)  নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করার।

এরপর ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতাসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা ছিলেন।

জানা গেছে, নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুকে ডিএসসিসির আর উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদকে ডিএনসিসির প্রধান করে গঠিত সমন্বয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ সঙ্গে কথা বলেন।

তাদের চেষ্টা ছিল ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির যেকোনো ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন প্রার্থীই যাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী করেন। তাদের উদ্যোগে গত কয়েকদিন ধরে চলা ‘বিদ্রোহীদের’ সঙ্গে আলোচনা, শলাপরামর্শ ও বৈঠকের পর গতকাল বুধবার পর্যন্ত কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেননি।

গত ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী- প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি। আজ সব ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন কি না, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতাও সন্দিহান।

দুই সিটির বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদেরও প্রশ্ন, সব ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন কি? আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডেই দলের একক প্রার্থী নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএসসিসির নির্বাচনে বর্তমান ১৯ জন কাউন্সিলর এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১১ জন দলের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

ডিএসসিসির ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৩টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ আছেন। তাদের সংখ্যা অন্তত ২৩০। একইভাবে ডিএনসিসিতে বর্তমান ২০ কাউন্সিলর এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১০ জন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

উত্তর সিটির ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের  মধ্যে ৪২টিতেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ রয়েছেন। তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ৭০।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হতে পারেন অনেকে, এমন শঙ্কা আছে শীর্ষ নেতৃত্বের। কাউন্সিলর পদে গত ২৯ ডিসেম্বর দলীয় সমর্থনের তালিকা প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে কয়েক দফা প্রার্থী পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ।

এ অবস্থায় ‘বিদ্রোহীদের’ অনেকে মনে করছেন, দলের ঘোষিত তালিকাই চূড়ান্ত নয়। দলীয় সমর্থন বদলাতে পারে। পর্যালোচনা করে ‘অধিকতর যোগ্য’ প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে।

আবার ‘বিদ্রোহীদের’ কেউ কেউ বলছেন, কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত কোনো ওয়ার্ড ‘উন্মুক্ত’ না হলেও ভোটের মাঠে থাকার কথা জানান বেশ কয়েক ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’।

তবে ৯ জানুয়ারির মধ্যে দলের মনোনয়নে পরিবর্তন না এলে ও দলের মনোনয়ন না পেলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলেও জানান কয়েক ‘বিদ্রোহী’। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ফারুক খান গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচনের শুরুতে আওয়ামী লীগের মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে একাধিক প্রার্থী থাকতে পারেন। এটা নতুন কিছু নয়, যেকোনো নির্বাচনের আগে দেখা যেতে পারে।

এবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে যারা দলের সমর্থন পাননি, তাদের মধ্যে অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে দল আশা করে। কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থনে পরিবর্তন আসার আর  তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।’

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অতীতে জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে না যেতে ও ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ না হতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়। শাস্তির কথাও বলা হয়। তবে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে অংশ নেওয়া নেতারা এখন দলেই আছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ উপজেলা নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কঠোর বার্তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখে ও চিঠিতে সীমাবদ্ধ থাকে বলেও তাদের অভিযোগ।

তবে এবারের নির্বাচনে দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হলে তার বিরুদ্ধে ‘কঠোর সাংগঠনিক’ ব্যবস্থা কী হতে পারে, তাকে একটা ‘নির্দিষ্ট সময়’, নাকি ‘আজীবনের জন্য’ দল থেকে বহিষ্কার করা হবে- এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিগগিরই আসবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়।

গত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনে ‘বিদ্রোহীদের’ শাস্তি না হওয়ায় এবারো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে কিছু হবে না, এমনটা কোনো প্রার্থীর মনে করার সুযোগ এবার কোনোভাবেই রাখতে চায় না দল।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কেউ ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হলে আর তার বিরুদ্ধে ‘কঠোর সাংগঠনিক’ ব্যবস্থা না নিলে অন্য নেতাকর্মীদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই ভোটের মাঠে কেউ ‘বিদ্রোহী’ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর হবে দল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!