• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পানি বৃদ্ধি ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে


লালমনিরহাট প্রতিনিধি জুলাই ১৪, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম
তিস্তার পানি বৃদ্ধি ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে

লালমনিরহাট : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ৬ দিন ধরে তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজের ফাট বাইপাসের বেশকিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। তিস্তা পাড়ে রেড এলার্ট অব্যাহত রয়েছেন। তিস্তার এমন পানি বৃদ্ধি গত ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, বড়খাতা শহরের সঙ্গে একমাত্র পাকা সড়কটি পানির তোড়ে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরিবারগুলো স্থানী গাইডবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পুরো জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৩৯টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় তিস্তার পানি প্রবাহ দোয়ানি পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে ৫২.৯৫ সেন্টিমিটার।  দুপুরে জেলার হাতীবান্ধার গড্ডিমারী মেডিকেল মোড় এলাকায়ে তিস্তার পানিতে একমাত্র পাঁকা সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে হাতীবান্ধা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

এদিকে শনিবার দুপুরে পানি সম্পাদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার লালমনিরহাটের দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গড্ডিমারী ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। পানি নিচে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। এছাড়াও হাতীবান্ধা থেকে বড়খাতার বাইপাস সড়কের তালেব মোড় ও মেডিকেল মোড়ে পাকা সড়কটি প্রায় ৫ শত মিটার ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজনের সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ভাঙনের ফলে এর মধ্যেই ওই এলাকার ৩০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এদিকে উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ৬ দিনের ভারি বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্ন  অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। জেলার লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধেয়ে আসছে পানির স্রোত। এতে বড় সমস্যায় পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। চার দিকে অথৈ পানির কারণে গবাদি পশুপাখি নিয়ে অনেকটা বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা। 

গত তিনদিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পানি বন্দি পরিবার গুলো এখনো সরকারী ভাবে কোন ত্রাণ সাহায্য শুকনো খাবার পৌঁছায়নি। পরিবারগুলো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

এবিষয়ে গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানান, গত ৩ দিন ধরে এই ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে সড়ক ভেঙে হাতীবান্ধার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার ৩৯টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করছে। বর্তমানে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুই দিনে তিস্তার পানি সর্বোচ্চ রেকর্ড ছড়িয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বন্যার্ত পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবাররে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এসএ/এএস

Wordbridge School
Link copied!