• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তুমি আমাদের চিরসাথি


ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর ২২, ২০১৯, ১১:১৫ এএম
তুমি আমাদের চিরসাথি

ঢাকা : আবেদ চলে গেল। কিন্তু তাকে বিদায় জানানো সম্ভব হবে না। সে আমাদের চিরসাথি হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সমাজের কোনো পরত নেই যেখানে আবেদের কর্মকাণ্ডের বাতাস লাগেনি। বাংলাদেশে সমাজের যে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে আবেদ তার প্রধান রূপকার।

 সমাজের যত ভাঙাচোরা অলিগলি, চোরাবালি, অলীক নিয়মনীতির ফাঁদ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল সবকিছুতে আবেদ তার সৃজনশীল প্রতিভার ছোঁয়া লাগিয়েছে। এই ছোঁয়া লাগিয়ে সবকিছু পাল্টে দিয়ে তাকে নতুন কাঠামোয় নিয়ে আসাই ছিল আবেদের ব্রত।

এটা বললে বোধ হয় বাড়িয়ে বলা হবে না যে, বাংলাদেশের সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন যিনি জীবনে কোনো না কোনোভাবে আবেদের কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করেননি।

আর তিনি যদি হন বিশাল গ্রামবাংলার দরিদ্রদের একজন, মহিলাদের একজন তাহলে তো তাঁকে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে আবেদের সাক্ষাৎ পেতে হয়েছে— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার, আত্মোপলব্ধি, আরো অনেক কিছুতে। আমাদের অজান্তে যে আবেদ আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তাকে আমরা বিদায় জানাব কীভাবে?

আবেদ বাংলাদেশের গরিব মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির অসাধারণ কারিগর। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দৈন্যের মুক্তিদাতা। সে নীরবে তার বিশাল কর্মকাণ্ড গড়ে তুলেছে। সে মানুষকে ডাক দিয়ে বসে থাকেনি, একাই এগিয়ে গেছে সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে। সে একাই এগিয়ে গেছে— একেবারে পুরো কাজটা সমাধা করার জন্য।

আবেদ সারা বিশ্বে এনজিও’র কনসেপ্ট বদলে দিয়েছে। একটি এনজিও দেশব্যাপী প্রায় সকল সমস্যার সামগ্রিক সমাধান দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে পারবে এরকম ধারণা ছিল একেবারে অকল্পনীয়।

দেশে-বিদেশে অসংখ্য রকম প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচি নিয়ে একটি বিশালায়তনের এনজিও’র ধারণা আবেদই দিয়ে গেল। তার চাইতেও তার বড় অবদান একক এনজিও ও বহুমাত্রিক এনজিও’র ব্যবস্থাপনাকে একটা নতুন বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে যেতে পারা। এই অবদান তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক গবেষকদের কাছ থেকে বরাবরই একটি প্রশ্ন আসে : বাংলাদেশে যে যা-ই করে সেটা দেশব্যাপী করে ফেলে— আমাদের দেশে এরকম হয় না কেন? আমার বরাবরের জবাব ছিল, তোমাদের দেশে তো এখনো আবেদের জন্ম হয়নি।

আবেদ একটি আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ তৈরি করে দিয়ে গেছে। তার দুরন্ত সাহস, আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতার কাহিনি আগামী সকল প্রজন্মকে অনবরতভাবে শক্তি জুগিয়ে যাবে। বহু প্রজন্ম পরেও আবেদ তাদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে বেঁচে থাকবে।

তুমি যে বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়ে গেছ তার বুনিয়াদের ওপর দ্রুত আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব নেওয়া পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ হলো।

আবেদ, তোমার কাছে জাতি চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে।

লেখক : শান্তিতে নোবেল জয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!