• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

থমকে যাবে উৎপাদন খাত


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৬, ২০১৯, ১১:৩৬ পিএম
থমকে যাবে উৎপাদন খাত

ঢাকা : শিল্প-কারখানায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। গ্যাস বিতরণকারী সংস্থাগুলোর এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে মুখ থুবড়ে পড়বে দেশের উৎপাদন খাত। যে কারণে থমকে যেতে পারে উৎপাদন খাত। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের বস্ত্র খাত ও পোশাক রফতানি। সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য উৎপাদিত পণ্যের দামও। বাড়বে আমদানি প্রবণতাও। লোকসান এড়ানোর যুক্তিতে বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে ভয়ানক বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।

গত সপ্তাহে গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস, বাখরাবাদ ও জালালাবাদ ও কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাবনাটি করা হয়। গণশুনানিতে শিল্প-কারখানার ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১৮ টাকা ৮৮ পয়সা।

উৎপাদন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যখন শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ দিতে পারছিল না, তখন নিজেদের উদ্যোগেই বিদ্যুৎ তৈরিতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করেছিল। তখন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে মাত্র ২ টাকা ৮২ পয়সায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস দেওয়া হয়েছিল। সেটা এখন ৯ টাকা ৬২ পয়সা। বেড়েছে ২৪১ শতাংশ। এখন আবার দাম দ্বিগুণ করতে চাইছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, এক মাসে যদি এক কোটি টাকার গ্যাসের বিল বেড়ে দেড় কোটি টাকা হয়, তাহলে আমাদের আগের চেয়ে অনেক বেশি বিল দেওয়া লাগবে। গ্যাসের দাম বাড়লেই লাভের পরিমাণ কিন্তু বাড়ে না। আমাদের পণ্য তৈরির খরচ যদি বেড়ে যায়, তাহলে কীভাবে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করব।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে, সব শ্রেণির গ্যাসের দাম গড়ে বাড়বে ১০২ শতাংশ। সার কারখানার গ্যাসের দাম বাড়বে সবচেয়ে বেশি। তারপর বিদ্যুতে। শিল্পেও দ্বিগুণের বেশি দাম বাড়াতে চায় কোম্পানিগুলো। আর আবাসিক সংযোগে এক চুলা ১ হাজার ৩৫০ এবং দুই চুলায় ১ হাজার ৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে আমার মনে হয় না এটা কোনো সুবিবেচনাপ্রসূত উদ্যোগ। কারণ বাংলাদেশ এখন এমন এক জায়গায় আছে যেখানে কিছুদিন পর নতুন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে, কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। আর এটা শিল্পায়নের জন্য ভালো কোনো সংবাদ নয়।

শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বিদেশি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, গত কয়েক বছর ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বছরে বিনিয়োগ ১ শতাংশও বাড়ছে না। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।

গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এটা বস্তাবায়ন হলে গার্মেন্ট সেক্টর বিশেষ করে টেক্সটাইল কারখানাগুলো টিকে থাকতে পারবে না। বর্তমানে সুতা উৎপাদনের যে খরচ, সেটাই উঠছে না। বিদেশি সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাচ্ছে না। আমাদের তো সুতা আমদানি করতে হয়। সেখানে ভারত, চীন, পাকিস্তান নিজেরা সুতা উৎপাদন করে। ফলে আমাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। বিদেশে রফতানির আয়ের ৮৩ ভাগই আসে গার্মেন্ট থেকে। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

গ্যাসের দাম সহনীয় রাখতে চলতি অর্থবছরে আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট বাবদ এ খাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কর ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তারপরও লোকসান এড়াতে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

তিনি বলেন, আমাদের গ্যাস উত্তোলন করতে নয় টাকা খরচ হলেও আমরা কিন্তু ছয় টাকায় বিক্রি করছি। এতে কিন্তু আমাদের অনেক লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই লোকসানের পরিমাণ কমানোর জন্যই দামের ব্যাপারে কিছুটা সমন্বয় করা হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম বলেন, দ্বিগুণ হারে গ্যাসের দাম বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এত ব্যাপকভাবে মূল্যবৃদ্ধি অতীতের অবস্থাকেও হার মানিয়ে দেবে। আমাদের এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি সহ্য করার প্রস্তুতি নেই। এ ছাড়া আমাদের সক্ষমতাও নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!