• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

থামছেই না দূর্বল কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধি


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৯, ২০২০, ০১:৫৯ পিএম
থামছেই না দূর্বল কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধি

ঢাকা : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ২৮ জুলাই ঝিলবাংলা সুগারের শেয়ারের দাম ছিল প্রায় ৬১ টাকা। আর সেই শেয়ারের দাম এক মাস না পেরোতেই হয়ে গেছে ২০০ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২২৬শতাংশ।

দূর্বল এমন আরও ডজেনখানিক কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। দুর্বল মৌল ভিত্তির বা ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিটির কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার–সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, কারসাজি ছাড়া এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এই অবস্থায় কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখা দরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, শাইনপুকুর সিরামিক, শ্যামপুর সুগার, জিকিউ বলপেন এবং সাভার রিফ্রাক্টরিজের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে উত্থান হয়।

জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে সম্প্রতি ডিএসই কোম্পানিগুলোকে নোটিশ পাঠায়। এর জবাবে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গত দুই দিনে পৃথক পৃথকভাবে জানানো হয়, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই তাদের শেয়ার দর এভাবে বাড়ছে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, সাধারণভাবে বলাই যায় গুজব ছড়িয়ে এক বা একাধিক কারসাজিকারক মিলে এ কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটাচ্ছে।

সাধারণত কারসাজিকারকেরা এসব কোম্পানির দাম বাড়াতে নানা ধরনের গুজব ছড়ায়। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দেখেন দাম শুধু বাড়ছেই, তখন তাঁরা ওই শেয়ার কিনতে আগ্রহী হন বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, দূর্বল কোম্পানি জানার পরও যেসব বিনিয়োগকারী এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁদের জন্য কোনো সহমর্মিতা কারও থাকা উচিত নয়।

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগর বা মন্দ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর ও প্লেজের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। ৪৫ দিনের মধ্যে পুনর্গঠ করা হবে কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ চার বছরের মধ্যে কোম্পানির সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতি করবে।

যেসব কোম্পানি দুই বছর বা তার বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সেসব কোম্পানি ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে চলমান বোর্ড পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হলে বর্তমান পরিচালক ও উদ্যোক্তারা অন্য কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি, পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানির পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না।

কমিশন এক্ষেত্রে বিশেষ নিরীক্ষক ও কমিশন কর্তৃক পর্যবেক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে পর্ষদ পুনর্গঠন করে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করবে। পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ চার বছরের মধ্যে কোম্পানির সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতি করাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোকে ছয় মাসের মধ্যে এজিএম করতে হবে। সব ধরনের শেয়ারহোল্ডার মিটিং (এজিএম/ইজিএম) ই-ভোটিং বা অনলাইনের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্মে অথবা হাইব্রিড সিস্টেমে করতে হবে।

এদিকে কোনো কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের বিষয়ে নতুন করে বেশকিছু শর্তারোপ করেছে কমিশন। শর্তগুলো হচ্ছে—ছয় মাস বা তার বেশি সময় কোম্পানির উৎপাদন বা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে অথবা পরপর দুই বছর নিট পরিচালন লোকসান অথবা পরিচালন কার্যক্রম থেকে নগদ অর্থপ্রবাহ ঋণাত্মক থাকলে অথবা যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির পুঞ্জীভূত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি হয় অথবা কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি যদি সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে, তবে কমিশনের অনুমতিক্রমে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই শেয়ারকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। তাছাড়া জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য শেয়ার দেনদেনে নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে টি প্লাস থ্রি করেছে বিএসইসি।

সোনালীনিউজ/এলএ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!