• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নিরাপদ সড়ক দিবস আজ

থামেনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৪:২১ পিএম
থামেনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল

ঢাকা : বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ওই সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন। তারও প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যমান খুব বেশি অগ্রগতি নেই। এখনো রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানি।

বেসরকারি হিসাব বলছে, এখনো সড়কে প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে প্রায় ২০ জনের। প্রাণহানির এ সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কম। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এমন প্রেক্ষাপটে আজ দেশব্যাপী পালিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।

‘জীবনের আগে জীবিকা নয়, সড়ক দুর্ঘটনা আর নয়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে তৃতীয়বারের মতো দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে। দিবসটি উদযাপনে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, আলোচনা সভা, র্যালি ও সড়ক সচেতনতা কার্যক্রম।

দিবসের শুরুতে সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। সকাল ১০টায় রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

বিকাল ৪টায় রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এর পাশাপাশি পরিবহন মালিক, চালক, যাত্রী ও পথচারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে বিতরণ করা হবে লিফলেট, পোস্টার ও স্টিকার।

এছাড়া গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা ও বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের সব জেলা ও উপজেলায় এ দিবসে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক দিবসকে সামাজিক গণজাগরণ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্লেষকরা। এদিকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সড়কে প্রাণ দিচ্ছে, আহত হচ্ছে।

তাদের সুরক্ষা দিতে এই দিবসটি অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতো গতানুগতিকভাবে এক দিন পালন না করে, নিরাপদ সড়ক দিবসকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারসংক্রান্ত আলোচনা সভা, মসজিদ-মন্দির-গির্জায় সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতাসংক্রান্ত আলোচনাসহ দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সমাজের সর্বস্তরে নিরাপদ সড়কের বার্তা পৌঁছে দেওয়া গেলে দিবসটি উদযাপনের সুফল পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন তিনি।   

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবমতে, বিগত চার বছরে সড়কে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৯ হাজার ৩১৫ জন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল এ সময়ে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সময়ে সারা দেশে ২১ হাজার ৩৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৯ হাজার ৪২৮ জন, যাদের অনেকই আহত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে সংঘটিত দুর্ঘটনার বেশির ভাগই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় না।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছেন।

২০১৭ সালে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন নিহত হয়েছেন। আর আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ হাজার ১৯৩ জন। ২০১৮ সালে সড়কে প্রাণ গেছে ৭ হাজার ২২১ জন। দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৫১৪টি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।

গত ৪ বছরে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৩১ হাজার ৯৪টি যানবাহন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস দুর্ঘটনার তথ্য মিলেছে। ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে। ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ অটোরিকশা দুর্ঘটনা। আর ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। নয় দশমিক ১৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ নছিমন করিমন ও ট্রাক্টর সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণকালে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের সময়ে সড়ক-মহাসড়কে উন্নয়নের ফলে যানবাহনের গতি বেড়েছে, এ সময়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং বিপজ্জনক ওভারটেকিং বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা থামছে না।

আয়তন ও জনসংখ্যার ঘনত্বের তুলনায়  বাংলাদেশে যেভাবে ছোট যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ঘটনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।

২০২১ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে জাতিসংঘের অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সড়কে পথচারীর মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই অঙ্গীকার নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করে সংগঠনটি।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সরকার তখন নানা উদ্যোগ হাতে নেয়। সুফল খুব বেশি মেলেনি। তবে মুজিববর্ষে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!