• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
মশার লার্ভা নিধন

দক্ষিণে ‘কমিউনিটি অ্যাম্বাসাডর’ উত্তরে ‘স্টিকার থেরাপি’!


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০১:৩৫ পিএম
দক্ষিণে ‘কমিউনিটি অ্যাম্বাসাডর’ উত্তরে ‘স্টিকার থেরাপি’!

ঢাকা : নগরজুড়ে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস মশার প্রাদুর্ভাব থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে নানা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তার সংস্থার এলাকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণসহ নাগরিকদের সমস্যা চিহ্নিত করতে কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছেন।

আর উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম একই মোড়কে বাসাবাড়ির এডিস মশা ও তার লার্ভা নিধনে ‘স্টিকার থেরাপি’র উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে দুই মেয়রের এমন উদ্যোগ মশা নিধনে কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত, লোক দেখানো পদক্ষেপ না নিয়ে দুই সংস্থাকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বলছেন, এডিস মশার উৎপত্তিস্থলের মধ্যে নগরবাসীর বাসাবাড়ি অন্যতম। এ জাতীয় মশা তিন দিনের বেশি জমে থাকা স্বচ্ছ পানি, বাসার ছাদ, ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, বেসিন, কমোড, এসি বা রেফ্রিজারেটরের পানিতে জন্মায়। এর সিংহভাগই বাসাবাড়ির অভ্যন্তরে জন্ম নিয়ে থাকে।

কিন্তু মশা বা তার উৎপত্তিস্থল নির্মূলের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশন তার নাগরিকদের বাসাবাড়িতে গিয়ে এসব ধ্বংস বা ওষুধ প্রয়োগের সুযোগ পায় না। সে কারণেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এতে কতটা সফলতা আসবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গত ৭ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন ও খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কারকরণ এবং মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বিষয়ক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, তারা নাগরিকদের এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছেন। তারা ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থল ও লার্ভা ধ্বংসেও কাজ করবেন।

এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকাকে চার ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগে সাত জন করে মোট ২৮ জন কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছি। তাদের কাজ হবে কোন কোন এলাকায় মশার উপদ্রব বাড়ছে, কোথায় ওষুধ ছিটানো লাগবে এসব চিহ্নিত করা এবং সেসব এলাকায় মশক নিধনকর্মী পাঠানো।

শুধু ডেঙ্গু নয়, জলাবদ্ধতা নিরসনেও নাগরিকদের সমন্বয়ে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করেছিল দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু বৃষ্টির সময় করপোরেশনের নিজস্ব কর্মীবাহিনী ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না। এ অবস্থায় মেয়রের এই কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডররা কতটা কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। নাগরিকদের বাসাবাড়িতে তাদের প্রবেশাধিকার নেই। আর্থিক কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় মাঠেও ছিল না তারা।

এ অবস্থায় দক্ষিণের মেয়রের এই উদ্যোগকে নতুন মোড়কে আবির্ভূত করছেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি তার প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি ভাগে ভাগ করে স্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত করে চিরুনি অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই অভিযানে যেসব বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, সেখানে ‘এই বাড়ি/স্থাপনায় এডিসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ শীর্ষক স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হবে।

এজন্য এরই মধ্যে কয়েক হাজার স্টিকার ছাপানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তিন দিনের বেশি কোনো স্থানে পরিষ্কার পানি জমা পড়ে থাকলে সেখানে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। সে অনুপাতে প্রতি তিন দিন পরপর বাসাবাড়ির প্রতিটি স্থান দেখা আবশ্যক।

কিন্তু মেয়রের এই কমিটি কতবার বাসাবাড়িতে গিয়ে এভাবে পরিদর্শন করতে পারবেন কিংবা নাগরিকরা সেই সুযোগ দেবেন কি-না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর নগরীর সব ঝুঁকিপূর্ণ বাসাবাড়িতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ শীর্ষক ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। ভবনে ফায়ার সার্ভিসের সেই ব্যানার লাগলেও কোনো নাগরিককেই সেসব ভবন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।

এ অবস্থায় স্টিকার বা ব্যানার নয়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আইনের প্রয়োগ হলেই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের মতে, সবার আগে এডিসের উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। উৎপাদনের জায়গা বন্ধ হলে সেখানে আর মশা থাকবে না। এজন্য সিটি করপোরেশনগুলো তাদের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। যেমনটা করেছে কলকাতায়।

এ বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যে বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাব, সেই বাড়িতে একটি স্টিকার লাগিয়ে দেব। এরপরেও যদি দেখা যায় বাড়ির মালিক সংশোধন হননি, তখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা প্রথমে আইন প্রয়োগ করতে চাই না। সংশোধনের সুযোগ দেব।

আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে মিটিং করেছি। আমাদের এক একটি ওয়ার্ডকে ১০টি ভাগে ভাগ করব। এর প্রতিটি ভাগকে আবারো ১০ ভাগ করব। প্রতিটি ভাগে ১০০ জন করে লোক নিয়োগ করব। সেখানে সামাজিকভাবে পরিচিত স্থানীয় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করব। এর প্রতিটি কমিটি প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে চেক করবে। আমার মনে হয় এতে বাসাবাড়ির মানুষ সচেতন হবে। এডিস মশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ডিএনসিসি মেয়র আরো বলেন, আসলে বাসাবাড়ির এডিস মশা নিধন শুধু সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নয়, সবার দায়িত্ব। তাই আমরা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। আমি চাই লার্ভা ধ্বংসে একটি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি। টেস্ট কেস হিসেবে আগামী ১৯ বা ২০ আগস্ট অভিযান পরিচালনা করতে চাই। এতে সফল হলে এই পদ্ধতিটি অন্যান্য সিটি করপোরেশনও অনুসরণ করতে পারবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!