ঢাকা : দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি আনতে পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া এ দলটিকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগও।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার। তাই দলকে নতুন করে সাজানোর পাশাপাশি সরকার থেকেও দলকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনাও আছে।
সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই পরিকল্পনাগুলোর বিশেষ উদ্দেশ্য। এসব কারণে এবার দলের আগাম জাতীয় সম্মেলন করার গুঞ্জনও আছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। আগামী সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আসছে, এমন আভাস ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেও দেওয়া হয়েছে।
এবারের জাতীয় সম্মেলনের সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের শীর্ষ পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে শেখ হাসিনার ওপর। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সবসময় চাইতেন দল ও সরকার আলাদা হবে। দল ও সরকার আলাদা হলে বেশ কয়েকটি লাভ হয়। এতে দল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, সরকারের ভুলত্রুটি হলে ধরিয়ে দিতে পারে। ফলে রাজনৈতিক দলটি শক্তিশালী হয় আর সরকারও ভুল-ভ্রান্তি শোধরাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু যা চাইতেন, তা বাস্তবায়ন করতে চান। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী দলে পরিণত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্র জানায়, টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক এলাকায় উপদলীয় কোন্দল ও রেষারেষিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দল সরকারের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে সেসব এলাকায় দিবসভিত্তিক কর্মসূচির বাইরে সাংগঠনিক তৎপরতা কম। এ জন্য দল ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে আগাম জাতীয় সম্মেলনের গুঞ্জন রয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরেই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়, এবার দলের আগামী সম্মেলন এগিয়ে আনা হতে পারে। নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে তা বিশ্বাসও করছেন। শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার মতে, আগে ভাগে জাতীয় সম্মেলনের না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানান, ‘আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হবে, এর আগে নয়।’
সূত্রমতে, আগামী সম্মেলনের আগেই দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ছয়জন নেতাকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা হচ্ছে। তাদেরকে সম্মানিত করা হবে বলে ইতোমধ্যে দলের এক যৌথসভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জানান। দলীয় প্রধানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নীতিনির্ধারকরা ধরে নেন, ওই ছয়জন নেতা মন্ত্রিসভায় না থাকায় দলের আরো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন।
তারা হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মেসবাহ উদ্দিন ও বাহাউদ্দিন নাছিম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগামী দিনে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন, এমন আলোচনাও দলে আছে।
সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভা গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্ট এইচ টি ইমাম ওই ছয়জন নেতার নির্বাচনে অবদান প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তারা ছয়জন এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন। যৌথসভায় উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জবাবে বলেন, তাদেরকে (ছয়জন নেতা) সম্মানিত করা হবে।
শীর্ষ নেতারা মনে করেন, দলকে সরকার থেকে আলাদা রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভা গড়েন আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে আরো গতি আনতে এবং সরকার ও দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় তিনি এ পরিকল্পনা বিবেচনায় নেন। সরকার থেকে দলের ‘আলাদা সত্তা’ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি বলেও যুক্তি দেখান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের চারজন শীর্ষ নেতা জানান, জনপ্রিয় ও একাধিকবার নির্বাচিত হলেও যেসব সংসদ সদস্যকে এবার মন্ত্রিসভায় নেয়া হয়নি, তাদের মধ্যে অনেককে আগামী জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। আবার মন্ত্রিসভায় থাকা কেউ কেউও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, জাঁদরেল নেতা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আরো কয়েকজনকে দলের শীর্ষ পদে আনা হতে পারে। অবশ্য মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হলে যাদের ঠাঁই পাওয়ার বিষয়ে দলের ভেতরে জোর প্রচারণা আছে, তাদের তালিকায়ও আছেন মোকতাদির চৌধুরী। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামও মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলে গুরুত্বপুর্ণ পদ পেতে পারেন, এমন আলোচনাও আছে।
সূত্র জানায়, আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে সরকার ও দল আলাদা করার ভাবনা বাস্তবে প্রয়োগ করতে গেলে যারা দলে সুযোগ পাবেন না, তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হতে পারে। আলোচিত ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে যারা এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি, আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন তারা। দল পরিচালনায় তাদের বর্তমান কার্যক্রম বিবেচনা করে পরবর্তীতে দলের শীর্ষ পদ দেয়া হবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :