• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আ.লীগে ভিন্নমত


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩১, ২০১৯, ০৫:২৫ পিএম
দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আ.লীগে ভিন্নমত

ঢাকা : প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।

এবার এ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার বিষয়েও মত আছে দলের ভেতরে। বিএনপির বর্জন আর সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দলীয় কোন্দল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ। বিরোধীদল না থাকলে ও আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হলে ভোটের পরিবেশ সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কাও আছে তাদের।

দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচন যেন একতরফা না হয়ে যায়, সে লক্ষ্যে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরেও মাঠে প্রার্থী রাখার কৌশল নিয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিহীন নতুন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি উন্মুক্তও করে দেওয়া হতে পারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এ পরিস্থিতিতে একক প্রার্থী নিশ্চিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে ক্ষমতাসীন দলটিকে।

‘বিএনপি না থাকায় বিদ্রোহী হলেও সহজ জয়’- এমন ধারণায় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারেন অনেকে। তখন কেন্দ্র কার্যকর অর্থে কঠোর না হলে অনেক স্থানে দলের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পাঠানো ‘অমুক-তমুককে প্রার্থী না করতে’ দলের অন্য নেতাদের চিঠি ও প্রার্থী বাছাইয়ে ডাকা বর্ধিত সভায় দলীয় গণ্ডগোলকে কোন্দলের আগাম প্রকাশ হিসেবে দেখছেন কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা। তাই একাদশ জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনে সংসদে উপজেলা পরিষদ আইনের সংশোধন করে নির্বাচনকে নির্দলীয় করা যায় কী না, এমন প্রস্তাবও দলের শীর্ষ বৈঠকে দেওয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ। তাদের যুক্তি, এ বছর উপজেলা নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেই ভালো।

আবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের ভেতর ভিন্ন চিন্তাও আছে। দলীয় প্রতীকে ভোট করার বিধানসহ ২০১৫ সালে উপজেলা পরিষদ আইন প্রণীত হওয়ার পর এ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন না করেই আইনটি সংশোধনের বিষয়ে প্রস্তাবের পক্ষে নন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেকে। তাদের মতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন হতে যাওয়ায় দলের তৃণমূলের পর্যায়ের নেতৃত্ব চাঙ্গা। সংসদ নির্বাচনে দলের ভূমিধস বিজয়ের মতো উপজেলায়ও বিজয় চায় দলটি। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

তাছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার আইন সংশোধনের প্রস্তাবে দলের অনেকেই রাজি হবেন না বলেও তারা মনে করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকার বিষয়ে দল যথাযথ উদ্যোগ নেবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও যেন কঠোর অবস্থানে থাকে, সেটাও নিশ্চিত করা হবে। প্রার্থী বাছাইয়ে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়গুলোয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এখন তৃণমূলে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাওয়ায় দলের বঞ্চিত ও জনপ্রিয়দের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়ে ভারসাম্য আনা সহজ হবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কিছু শঙ্কা থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।’

তথ্য মতে, এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান- এ তিন পদে দলীয় প্রতীকে আগামী মার্চ মাস থেকে ধাপে ধাপে নির্বাচন হওয়ার কথা। তিনটি পদের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ তিনজন করে নয়জন প্রার্থীর তালিকা পাঠাতে তৃণমূল কমিটিগুলোকে চিঠিও পাঠায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থী তালিকা থেকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

তবে বুধবার (৩০ জানুয়ারি) দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তিনটি পদে দলীয় প্রার্থীর নাম চাইলেও এখন দল দুটি পদ বাদ দিয়ে শুধু চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের গঠনতন্ত্রের ২৮৪ ধারা অনুযায়ী জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষরে চেয়ারম্যান পদের জন্য ঐক্যমতের ভিত্তিতে একক প্রার্থী অথবা তিনজনের প্রার্থী তালিকা পাঠাতে হবে। তালিকা পাঠাতে হবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকার ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীজট। প্রতিটি চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে গড়ে ৮ জন করে প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। প্রার্থীর ছড়াছড়ি হওয়ায় বাছাইয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আবার প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ডাকা বর্ধিত সভায়ও কোন্দলের প্রকাশ ঘটছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ডাকা বর্ধিত সভা পণ্ড করে দেয় নেতাকর্মীরা। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সভাস্থল ত্যাগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। গত মঙ্গলবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা হলরুমে বর্ধিত সভা শুরু হলে প্রার্থী বাছাইয়ে প্রক্রিয়া নিয়ে গণ্ডগোল বাধে। এক পর্যায়ে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ বলে ধাওয়া করেন অন্য নেতাকর্মীরা। দেশের আরো কয়েকটি উপজেলায় বর্ধিত সভা পণ্ড হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মাগুরার মুহম্মদপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নানকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে সেখানকার কয়েক নেতা কেন্দ্রের কাছে গতকাল চিঠি পাঠিয়েছেন। এমন চিঠি এসেছে আরো কয়েকটি উপজেলা থেকেও।

দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠ শান্তিপূর্ণ রাখতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর বার্তা পাঠাচ্ছে দল। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ও দলের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যেন দলীয় কোন্দলের প্রকাশ না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময় ঘটা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য এবার আগেভাগেই দল সতর্ক। বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ বন্ধ করতে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সংসদ সদস্যদের আত্মীয়-স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!