• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
উপজেলা নির্বাচন

দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে সরব ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০২:০২ পিএম
দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে সরব ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’

ঢাকা : প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি অংশ না নেওয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে মূলত আছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে সরব ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’। উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ ‘উন্মুক্ত’ করে দেওয়ার কৌশল নিলেও দলীয় কোন্দলের প্রকাশ ঠেকাতে সতর্ক। কোন্দল ঠেকাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা ও উপজেলাগুলোর নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা পাঠানো হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে।

দেশের কোনো এলাকায় উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের প্রকাশ ঘটলে এবং সেসবের জন্য দল সমালোচনার শিকার হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাঠে ছড়িয়ে পড়ে কি না, সেদিকেও দল থেকে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে কেন্দ্রীয় পর্যায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলেও কোন্দলের জের ধরে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে ‘নমনীয়’ হলেও আর তাদের ‘ছাড়’ দিলেও এ সুযোগে সারা দেশের তৃণমূলে প্রার্থীরা পরস্পরকে ঘায়েল করতে নানাভাবে চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় প্রচারণায় একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগারের ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এতে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর আগে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়ে হাজারো অভিযোগ। ফলে ভোটের মাঠে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

এ ছাড়া অতীতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যেই ছিল সেসব সংঘাত ও কোন্দল। অনেকেই নিজ নিজ বলয় সৃষ্টি করে মাঠপর্যায়ে নিজের শক্তির জানান দেন। সমাবেশ-পাল্টাসমাবেশও করেন। একে-অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। পরস্পরবিরোধী গ্রুপের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ান। মামলাও হয় পাল্টাপাল্টি। নিজ দলের নেতাকর্মীরাই প্রতিপক্ষকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেন, এমন ঘটনাও কম নয়। ফলে আওয়ামী লীগকে সমালোচনার শিকার হতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এবার প্রথমবারের মতো উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও কোনো মাথাব্যাথা নেই ক্ষমতাসীন দলটির। আপাতদৃষ্টিতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারে নমনীয় রয়েছে দল। শুধু নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার ক্ষেত্র তৈরিতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয় দলটি। একই সঙ্গে কিছু উদ্বেগও কাজ করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে।’

সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে সারা দেশের তৃণমূল কমিটির প্রস্তাবিত অনেক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে এসে পৌঁছায়নি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নাম বাদ দেওয়া ও তৃণমূলের ভোটের ফল বদলিয়ে তালিকায় অপছন্দের নেতার নাম পিছিয়ে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। দেশের অধিকাংশ উপজেলা থেকে প্রস্তাবিত দলীয় প্রার্থীর তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এসে পৌঁছালেও অনেক তালিকার পেছনে নানা ‘নাটকীয়তা’ আছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

কয়েক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নিজ জেলা ও উপজেলায় পছন্দের প্রার্থীদের নাম তালিকায় রেখেছেন বলে অভিযোগ আছে। এক্ষেত্রে তারা তৃণমূলের প্রস্তাবিত নেতার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন বা তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পৌঁছানোর আগেই ‘গায়েব’ করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্রার্থীদের নাম বাদ দিয়েছেন তালিকা থেকে। এ নিয়ে তৃণমূলে তীব্র অসন্তোষের জন্ম হয়েছে।

এসব বিষয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব  অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়মের বিষয়গুলো মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আনার চেষ্টা করেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। নির্বাচনের মাঠে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ যেন না ঘটে, সেদিকেও সতর্ক থাকতে প্রার্থীসহ দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফন্ট ও ২০-দলীয় জোটের অনুপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে মহাজোট ও ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে আলাদা অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেয় আওয়ামী লীগ। তারা আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানালেও যোগ্য প্রার্থী না থাকায় অনেক উপজেলায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। যেসব উপজেলায় শরিক দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই, সেখানে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি অনেকটা নমনীয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র নমনীয় হওয়ায় তারাও দলীয় প্রার্থীকে ভোটের মাঠে ছাড় দিতে রাজি নন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!