দশ বছরে ৯৫ হাজার মামলা আসামি ২৭ লাখ নেতাকর্মী

ঢাকা : গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবার সেই তালিকা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে বিএনপি।

রোববার (১৮ নভেম্বর) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই হস্তক্ষেপ চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মামলা ও তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খান ইসিতে এসে মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইসির প্রাপ্তি জারি শাখায় জমা দেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা গায়েবি মামলা রুজ্জু ও গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এসব গায়েবি ও মিথ্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করার জন্য বিএনপিসহ ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যজোট ৭ দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়। ওই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব মামলা ও গ্রেফতারের তথ্য তার দফতরে পাঠাতে বলেন।

এ অনুযায়ী গত ৭ নভেম্বর ১০৪৬ টি ও পরে ১৩ নভেম্বর ১০০২ টি মামলার তথ্য জানানো হয়। তবে তালিকা পাঠানোর পরও এখন পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেওয়ার কোনো তথ্য আমাদের অবহিত করা হয়নি। এমন অবস্থায় বিএনপি বিষয়টিতে ইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্য ৯৪ হাজার ৭৬৯টি। মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮৮ জনকে।  এর মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলা হয়েছে ৯০ হজার ৩৪০টি। এ সব মামলায় আসামি ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন। এছাড়া চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৯টি। আড়াই মাসে দায়ের করা মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৪৪১ জনকে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জেলহাজতে থাকা আসামির সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন। নেতাকর্মী হত্যার সংখ্যা ১ হাজার ৫১২ জন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিএনপি নেতাকর্মী হত্যার সংখ্যা ৭৮২ জন। বিভিন্ন দলের মোট গুমের সংখ্যা ১ হাজার ২০৪জন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৮১ জনকে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে গুম ছিল ৪২৩ জন। গুরুতর জখম ও আহত হয়েছেন ১০ হাজার ১২৬ জন।

এসব মামলার অধিকাংশ ‘গায়েবি ও মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী যাতে ‘গায়েবি ও মিথ্যা’ মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করে- সে জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হস্তক্ষেপও চেয়েছে বিএনপি।

এর আগে গত ১৬ নভেম্বর সিইসির কাছের ৪৭২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের তালিকা জমা দেয় বিএনপি। ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর ও ভোট গ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।

সোনালীনিউজ/এমটিআই