• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
দাঁতের যত্ন

দাঁত প্রতিস্থাপন কতটা জরুরি


ডা. আওরঙ্গজেব আরু জুলাই ৩০, ২০১৭, ১২:৫৪ পিএম
দাঁত প্রতিস্থাপন কতটা জরুরি

ঢাকা : দেহের সুস্থতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আমাদের জড়িয়ে আছে মুখ ও দাঁতের সুস্থতা। একটি দাঁতের ব্যথায় মুহূর্তেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আমাদের শরীর-মন। তাই দাঁত নিয়ে অবহেলা  তো নয়ই, উপরন্তু প্রয়োজন সচেতনা ও বাড়তি সতর্কতা।

অবহেলা বা দুর্ঘটনা যেকোনো কারণেই আমাদেরকে হারাতে হয় মূল্যবান এক বা একাধিক দাঁত। দাঁতের পরিচর্যায় অবহেলায় গর্ত, ক্ষয় কিংবা ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেক সময় ফেলেও দিতে হয়। দাঁত ফেলে দিয়েই আমরা মনে করি আমাদের চিকিৎসা শেষ। আসলে তা নয়, দাঁত ফেলে দেওয়ার পর যে খালি জায়গা তৈরি হয় তা খুব দ্রুতই পূরণ করে দিতে হবে নয়তো পাশের দুটো দাঁত ক্রমশ দুর্বল হয়ে হেলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে খালি জায়গা পূরণে যে চিকিৎসা রয়েছে তা হলো ডেন্টাল ব্রিজ। এতে খালি জায়গায় একটি ফলস বা কৃত্রিম দাঁত বসিয়ে পাশের দুই দাঁতের সঙ্গে সংযোগ বা ব্রিজ করে দেওয়া হয়।

এ ধরনের ফলস টিথ বা কৃত্রিম দাঁতকে বলা হয় পনটিক্স। সাধারণত অ্যালয়, পোর্সেলিন ও সিরামিকস দিয়ে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়। পদ্ধতিগত কারণে চিকিৎসকেরা চার ধরনের ডেন্টাল ব্রিজ ব্যবহার করে থাকেন।

এগুলো হলো: ট্র্যাডিশনাল ব্রিজ, ক্যানটিলিভার ব্রিজ, মেরিল্যান্ড বন্ডেড ব্রিজ ও রিমোভেবল ব্রিজ।

ট্র্যাডিশনাল ব্রিজ সর্বাধুনিক ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত দাঁতটি খুবই মজবুত হয়। এক্ষেত্রে ফাঁকা স্থানে থাকে কৃত্রিম দাঁত। এর ভেতরের অংশে থাকে মেটাল বা ধাতু এবং বাইরে থাকে পোরসেলিনের আবরণ। কৃত্রিম দাঁতটিকে এমনভাবে পাশের দুই দাঁতের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয় যাতে বোঝাই যায় না যে মাঝের দাঁতটি আসল নয়। কৃত্রিম দাঁতসহ সাহায্যকারী দুই দাঁতের উপরে পোরসেলিন ক্যাপ দিয়ে একসঙ্গে ব্রিজ করা হয়।

অন্যান্য দাঁতের রঙের সঙ্গে মিল রেখে পোরসেলিন কোটিং বা প্রলেপ দেওয়া হয়। এ কারণে এটি খুবই জনপ্রিয় ও নিশ্চিত পদ্ধতি। মনে রাখতে হবে এই পদ্ধতিতে কিছুদিন সময় লাগবে, একদিনে এটি হবে না। প্রথমে পাশের দুই দাঁতের এনামেলের কিছু অংশ সরিয়ে নেওয়া হয়, পরে উপর ও নিচের পাটির সকল দাঁতের একটি ইমপ্রেশন দেওয়া হয়। পরে তা দিয়ে দাঁতের মডেল তৈরি করা হয়। মডেল যত নিখুঁত হবে আপনার ব্রিজটিও তত মজবুত ও সুন্দর হবে। ব্রিজ যদি ভালো না হয় তবে মাঢ়িতে, দাঁতে ব্যথা হতে পারে, ইনফেকশন হতে পারে। এক-দুই সপ্তাহে চিকৎসাটি শেষ হয়ে যায়। ব্রিজ লাগানোর পরে দাঁতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে চিন্তার কোনো বিষয় নেই, ব্রিজটি খুলে পুনরায় দাঁতের ইমপ্রেশন নিয়ে নতুন একটি ব্রিজ লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, নতুন যে কোনো বিষয়ে অভ্যস্ত হতে প্রথমে অসুবিধা হলেও পরে তা ঠিক হয়ে যায়। দাঁতের ব্রিজটির ক্ষেত্রে সেরকম হলে সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন।

খুঁতখুঁতে ভাব না রেখে স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্য করুন, সমস্যাটি জটিল কিনা ? এটি একটি নিশ্চিত প্রক্রিয়া; অবহেলা করলে এটি ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করালে ও এটির যথাযথ ব্যবহারে সারাজীবন এটি ব্যবহার করা যায়। অবশ্য সাধারণ দাঁতের মতোই এর যতœ নিতে হয়। ব্রাশ, ফ্লসিং দুটোই করা যায়। তবে ফ্লসিংয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের দেখানো প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করতে হবে।

অন্যসব প্রক্রিয়াগুলোর জটিলতা আছে তাই সেগুলো কম ব্যবহৃত হয়। মেরিল্যান্ড বা রেসিন বন্ডেড ব্রিজেও একটি ফলস টুথ থাকে যার দুই পাশে থাকে দুটো উইং। ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়। রিমোভেবল ব্রিজের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। খরচের কথা চিন্তা করে অনেকে এটি এক সময় ব্যবহার করলেও পরবর্তীসময়ে তা ব্যবহারের জটিলতায় বদলে ফেলতে বাধ্য হয়।

জরিপে পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাপী ৪৪ বছর বয়সে শতকরা ৬৯ ভাগ মানুষের দুর্ঘটনা, ক্ষয় কিংবা মাঢ়িজনিত সমস্যার কারণে অন্তত একটি দাঁত হারাতে হয়। আর এসব মানুষের বেশিরভাগই দাঁতের চিকিৎসায় ট্র্যাডিশনাল ডেন্টাল ব্রিজ ব্যবহার করে থাকেন। তাই দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট না করে সঠিক সময়ে ডেন্টাল ব্রিজ করে নেওয়া সচেতনতারই বহিঃপ্রকাশ।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডেন্টাল হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। চিফ কনসালটেন্ট, ইলাহী ডেন্টাল কেয়ার। মেরুল বাড্ডা প্রধান সড়ক, ঢাকা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!