• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি রতন!


কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৭:২১ পিএম
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি রতন!

কিশোরগঞ্জ: সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সচ্ছল পরিবারের সদস্য রতন মিয়া (৫৫) শিকলবন্দি ছবি। চোখেমুখে তার কৈশোর-যৌবনের ফেলা আসা স্বাদ-স্বপ্ন আর দুর্বিসহ জীবনের না বলা বেদনার ছাপ। তিনি সব দুঃখ বেদনা প্রকাশের শক্তি হারিয়েও আজ নির্বাক। মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়ার পর ৩০ বছর ধরে একটি ছোট্ট অন্ধকার কক্ষে বিনাচিকিৎসায় কাটাচ্ছিলেন শিকলবন্দি হয়ে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মো. নাহিদ হাসানের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ রতন মিয়াকে উদ্ধার করা হয়। তাকে পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

রতন মিয়া উপজেলার দক্ষিণ ষাটিয়াদী গ্রামের হাজীবাড়ির মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে। সম্পত্তির লোভে চিকিৎসা না করিয়ে তাকে পাগল বানিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।সোশ্যাল মিডিয়ায় তার শিকলবন্দি জীবন কাহিনী ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় সব মহলে। স্বজনরা শুরুতে চিকিৎসা করানোর দাবি করলেও কোথায় কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছিলেন তা বলতে পারেননি।

জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বলছে, বিষয়টি অবগত হয়ে অবহেলার কারণ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে। ঘটনাটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং অমার্জনীয় অপরাধ বলে তাকে উচ্চতর চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থার আশ্বাস জেলার সিভিল সার্জনের।

জানা গেছে, ৩০ বছর আগে রতন মিয়া গরু বাঁধার খুঁটি দ্বারা মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তার পর থেকেই তার কোনো চিকিৎসা না করিয়ে বড় ভাই ও ছোট ভাই তাকে শিকলবন্দি করে রাখেন।

পরে ছোটভাই মারা যাওয়ায় বড়ভাই পৈতৃক সহায়-সম্পত্তি এককভাবে ভোগ করছেন। বসতঘরের বারান্দায় একটি ছোট্ট কক্ষে রতনকে শিকলবন্দি করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা হয়। এ ছোট্ট কক্ষের ভেতর একটি পাকা খাম তৈরি করে সেখানে তার পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়। এ ছোট্ট কক্ষেই প্রস্রাব পায়খানার জন্য লেট্রিনও করে দেয়া হয়। আর এ নির্জন এবং অস্বাস্থ্যকর তালাবদ্ধ ছোট্ট কক্ষেই কেটেছে তার জীবনের মূল্যবান ৩০ বছর।

জন্মদাতা মা-বাবার অবর্তমানে ভাইয়ের গলগ্রহ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছিলেন রতন মিয়া। অথচ একসময় এই প্রাণোচ্ছল সৌখিন যুবক রতনের বাঁশির সুর মুগ্ধ করত এলাকাবাসীকে।
শিকলবন্দি রতনের এ ঘটনাটি এতদিন লোকচক্ষুর আড়াল থাকলেও নতুন প্রজন্মের সচেতন তরুণরা জানতে পেরে অমানবিক ঘটনা বিবেচনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়ে পাটুয়াভাঙা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন জানান, তিনিও এ ঘটনাটি জানতেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছেন, সম্পত্তির লোভে চিকিৎসা না করিয়ে রতনকে পাগল বানিয়ে ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।

বিষয়টি নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান জানান, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে আমাদের গোচরে আসে। অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বিবেচনায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিগণকে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি।

একই সঙ্গে রতন মিয়ার চিকিৎসা অবহেলার রহস্যও খোঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমানও জানালেন, চিকিৎসা না করিয়ে কাউকে শিকলবন্দি রাখা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, গুরুতর অপরাধও বটে। ৩০ বছর পর উদ্ধার রতন মিয়ার উচ্চতর চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিলেন তিনি।

সোনলীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!