• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডারসমতা আবশ্যক


আনিকা তাসনিম অক্টোবর ২০, ২০২০, ০২:০৯ পিএম
দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডারসমতা আবশ্যক

ঢাকা : নারীর ক্ষমতায়ন হলো সমতাভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য। পূর্ণাঙ্গ জীবনমান অর্জনের সঠিক হিসাব-নিকাশের ব্যাখ্যা হলো ক্ষমতায়ন। ক্ষমতায়ন নারীর আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করে, যার দ্বারা সে সমাজ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসে। পরমুখাপেক্ষী না হয়ে স্বনির্ভর হয়।

দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডারসমতা অর্জন একান্ত প্রয়োজন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সামপ্রতিক জনসংখ্যাতাত্ত্বিক প্রভাব গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০৩১ সাল নাগাদ ১৯ কোটিতে পৌঁছাবে। আর ২০৪০ সালের আগেই এ সংখ্যা ২০ কোটি হবে। এর অর্থ হলো, এ দেশে নারীর সংখ্যা হবে ১০ কোটি। তারা দেশের মানব মূলধন ভিত্তির অর্ধেকের প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে। বিভিন্ন ঘটনায় এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, যখন কোনো দেশের নারীরা বৈষম্য ও অন্যায়ের শিকার হয়, তখন তাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যবিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের গতিও কমে যায়। অন্যদিকে নারীদের যখন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়, তখন দেশের আপামর জনগোষ্ঠীই সুবিধাপ্রাপ্ত হয়।

নারীরা একটি শক্তিশালী দেশ, স্থিতিশীল সমাজ ও পরিবারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তবু এ দেশে নারী ও মেয়েরা এখনো বিভিন্ন বাধা ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এসব কারণে তাদের সম্ভাবনাগুলো অপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে এবং মানবাধিকার ও স্বাধীনতা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নারীর প্রতি সহিংসতা শীর্ষক এক জরিপে দেখা যায়, ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারী কোনো না কোনো সময় স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নারী শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন।

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের ব্যাপকতা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো খুবই কম। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৬০ শতাংশ। এটি পুরুষের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম। দেশে এখন কর্মক্ষম পুরুষের প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ করছেন। অন্যদিকে কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কাজ করেন মাত্র ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে যদি সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ কর্মক্ষম মেয়েদের কাজ দেওয়া যায়, তাহলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হবে সাড়ে ৭ শতাংশ। একই কাজের জন্য নারীদের পুরুষের তুলনায় কম মজুরি দেওয়ার প্রবণতাও বেশি। আবার নারীদের তুলনামূলক কম নিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ দেওয়া হয়। অনেক সময় তারা এমন সব শ্রমে নিয়োজিত থাকেন, যেখানে কোনো ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বা শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে না।

বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ এবং জেন্ডারসমতা অর্জনের লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে নারী ক্ষমতায়নের যাত্রা শুরু হয়। পরবরর্তীকালে জেন্ডারসমতা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারীর উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নীতি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। যেমন—যৌন হয়রানি বন্ধে হাইকোর্টের নীতিমালা (২০০৯), পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও কর্মপরিকল্পনা ২০১৩ ইত্যাদি। তবে এসব নীতিমালা ও আইনের সত্যিকার প্রয়োগের অভাবে বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়ন ও জেন্ডারসমতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সুতরাং আমাদের নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে উল্লিখিত আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে কোনো নারী আর পেছনে না পড়ে থাকে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডারবিষয়ক সমস্যাগুলো জটিল ও বহুমাত্রিক। তাই বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করা, বিশেষ করে আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!