• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছর পর জানা গেল কান্তার খুনি কে


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০, ১০:৪৮ এএম
দুই বছর পর জানা গেল কান্তার খুনি কে

ঢাকা : কান্তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে প্রতারক, লম্পট ও অসহায়ত্বকে জিম্মি করে একাধিক মেয়ের জীবন নষ্ট করার কথা লেখায় কান্তাকে গলা টিপে হত্যা করে তার স্বামী। গত দুই বছর আগে ভালবাসার অভিনয় করে ভারতে বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে স্ত্রী মার্জিয়া কান্তার মনজয়ের চেষ্টা করে এতে সফলও হয় স্বামী সাগর। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার আশুলিয়ায় কান্তা বিউটি পার্লারের মালিক মার্জিয়া কান্তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় সাগর। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থেকে স্বামী-স্ত্রী প্রথমে শরীয়তপুরে আবাসিক হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনালে এসে রাত কাটায়। সেখানে সাগরের মামাত ভাই মামুন এসে তাদের সাথে যুক্ত হয়। পরদিন তারা শরীয়তপুর থেকে কুয়াকাটার এসে আবাসিক হোটেল আল মদিনার বি-১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। 

কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল আল মদিনার কক্ষে গলা টিপে হত্যার প্রায় দুই বছর পর পিবিআই’র তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

জানা যায়, সাগর ও তার এক সহযোগী কান্তাকে নিয়ে ওই হোটেলে পর্যটক হিসেবে ওঠার পর কোন এক সময় তাকে গলা টিপে হত্যা করে পলিথিনে লাশ মুড়িয়ে খাটের নিচে রেখে দুই খুনি পালিয়ে যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিকেল পর্যন্ত ওই হোটেল কক্ষে তালা ঝুলতে দেখে কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে মহিপুর থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে কান্তার ব্যবহৃত জামাকাপড় জব্দ করে নিয়ে গেলেও বক্স খাটের নিচে লাশ থাকার বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি। 

এর দুই তিন দিন পর ওই কক্ষ থেকে দুর্গন্ধ বের হলে হোটেল ম্যানেজার আমির এবং হোটেল বয় সাইফুলের নজরে এলে তারা হোটেল মালিককে জানায়। হোটেল মালিক দেলোয়ার ও তার ছোট ভাই আনোয়ার এবং ম্যানেজার আমির ও বয় সাইফুল চারজনে মিলে হত্যার আলামত নষ্ট করে লাশগুমের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত এগারটার দিকে বস্তায় ভরে দোলোয়ার ও আনোয়ার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে লেম্বুরচর এলাকায় আন্ধার মানিক নদী মোহনায় লাশ ভাসিয়ে দেয়। এরপর তারা এবিষয়টি নিয়ে আর কোথাও মুখ খোলেনি। এভাবে ঘটনাটি আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের ধামাচাপা দেবার অপচেষ্টা এবং খুনিরা এতদিন ধরা ছোয়ার বাইরে থাকলেও পিবিআইর তদন্তে হত্যাকাণ্ডের রহস্য দুই বছর পর উন্মেচিত হয়। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মোঃ মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বেলাবো থানার নরসিংদী জেলার সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তা ঢাকার আশুলিয়ায় বিউটি পার্লারের ব্যবসা করতেন। সেখানে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর শহিদুল ইসলাম সাগরের সাথে পরিচয়ের সূত্রে দুই লাখ টাকার কাবিননামায় মুসলিম শরীয়ত অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর মার্জিয়া কান্তা জানতে পারে তার স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরের আরও স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। বিষয়টি গোপন করে তাকে বিয়ে করায় সহজে মেনে নিতে পারছিল না কান্তা। 

এনিয়ে কান্তার ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে প্রতারক লম্পট হিসেবে তুলে ধরাই কাল হলো কান্তার জীবনে। এ ঘটনায় কৌশলের আশ্রয় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায় প্রতারক স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগর। 

এঘটনার প্রায় একবছর পর নরসিংদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরসহ তার পরিবারের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হতভাগ্য মার্জিয়া কন্তার বাবা সোহরাব হোসেন রতন বাদী হয়ে গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ হত্যা করে লাশ গুমের মামলা দায়ের করে। 

মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে নরসিংদীর বেলাবো থানায় এজাহার হিসেবে গণ্যকরে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরবর্তিতে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অভিযুক্ত স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে গ্রেফতারের পর তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি লাভ করে। এরপর খুনের অপর সহযোগী মামুন পিবিআইর জালে ধরা পড়ে চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর ধরা পড়লে তদন্তের আরও অগ্রগতিগতি হয়। মামুনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বর তাকে নিয়ে পিবিআই কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল আল-মদিনায় অভিযানে গেলে খুব সহজেই হোটেল মালিক দোলোয়ার ও তার ছোট ভাই আনোয়ার ও হোটেল ম্যানেজার এবং বয় মার্জিয়া কান্তার লাশ গুমের সত্যতা স্বীকার করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর কুয়াকাটা থেকে তাদের চারজনকে নরসিংদী নিয়ে যায় পিবিআই। 

মামলার তদন্তের বিস্তারিত অগ্রগতি তুলে ধরে পিবিআই তাদের নরসিংদী কার্যালয়ে ৫ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। 

গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের সত্যতা স্বীকার করেছে বলে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী পিবিআইর পরিদর্শক মো: মনিরুজ্জামান গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করার কথা জানিয়েছেন। 

মহিপুর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হোটেলে অবস্থানকারীরা ভাড়া পরিশোধ না করেই তাদের ব্যবহৃত কিছু জামাকাপড় রেখে পালিয়েছে মর্মে হোটেল আল মদিনার পক্ষ থেকে পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওইসব ব্যবহৃত জামাকাপড় তখন জব্দ করে থানায় রাখে। পরবর্তীতে খাটের নিচে লাশ পাওয়ার বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে হোটেল মালিক ও কর্মচারীরা আলামত নষ্ট করে লাশ গুম করে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!