• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসছে বিশ্বাস বিল্ডার্সের থলের বিড়াল!


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০, ০২:০২ পিএম
দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসছে বিশ্বাস বিল্ডার্সের থলের বিড়াল!

ঢাকা : দুর্নীতির মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন ডেভেলপার কোম্পানি বিশ্বাস বিল্ডার্সের কর্ণধার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ওরফে দুলাল বিশ্বাস। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে একে একে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। তার অবৈধ সম্পদের পাহাড় দেখে দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিস্মিত।

সম্প্রতি বিশ্বাস বিল্ডার্সের কর্ণধার নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ জমা হয়েছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলামকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন। জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল তার সম্পদের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রশ্নে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

দুদকে দায়ের হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নজরুল বিশ্বাস ওরফে দুলাল বিশ্বাস বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহ-সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার পাঁচপাখিয়া গ্রামে। তার বাবা আব্দুর রশীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন; কিন্তু স্বাধীনতার পর পথভ্রষ্ট হন। ১৯৭৩ সালে ডাকাতির একটি ঘটনায় তিনি জেলও খাটেন। ছয় বছর জেল খেটে বের হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। তার পুরো পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুধু তাই নয় ‘টাকার জোরে’ নজরুল বিশ্বাস কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতিও হয়েছেন। গ্রামে একসময় নজরুল বিশ্বাসের ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই ছিল না।

সংসার চালাতে মাটি কাটা থেকে শুরু করে অন্যের বাড়িতে কাজও করেছেন নজরুল। নব্বইয়ের দশকে বিডিআরে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন নজরুল। পরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তার চাকরি চলে যায়। এরপর চলে আসেন ঢাকায়।

জানা গেছে, অনেক চাকরি খোঁজার পর রাজধানীর মুগদার একটি রড সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয় নজরুল বিশ্বাসের। ঘটনাচক্রে সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিবাহিত মেয়ের সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয়। সেই মেয়ের স্বামী থাকতেন জাপানে। মেয়েটির সঙ্গে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ে করেন সেই মেয়েকে। কিন্তু যে নজরুলের কিছুই ছিল না সেই নজরুল গ্রামের বাড়িতে এখন ৫০ বিঘা জমির ওপর করেছেন রাজপ্রাসাদ বাড়ি।

এ ছাড়া বিশ্বাস বিল্ডার্সের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে জানা যায়, ধানমন্ডিতে জে কে টাওয়ার, ক্রেডেন্স ও বিশ্বাস আম্রঝুড়ি, গুলশানে গ্রেস, মিরপুরে বিশ্বাস দিগন্ত, মিরপুর-৬-এ বিশ্বাস নীলাঞ্জনা, মিরপুর-১০-এ বিশ্বাস মাধবী, উত্তরায় বিশ্বাস বলাকা, বিশ্বাস ফাইয়াস, বিশ্বাস মারজান, বিশ্বাস প্রশান্তি, পশ্চিম কাফরুলে বিশ্বাস মঈন টাওয়ার, মহাখালীতে আরজত আলী কমপ্লেক্স ও সুলতানা প্লাজা, খিলগাঁওয়ে বিশ্বাস হাসনা হেনা, বিশ্বাস চলন্তিকা, মোহাম্মদপুরে বিশ্বাস নীহারিকা ও কুঞ্জছায়া, হবিগঞ্জে সাইহাম ফিউচার কমপ্লেক্স। আর সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে— নিউ মার্কেটে নিউ মার্কেট সিটি কমপ্লেক্স, উত্তরায় বিশ্বাস লেক টাচ, মোহাম্মদপুরে বিশ্বাস রাতুল, কমলাপুরে বিশ্বাস ভিলা ও বিশ্বাস টাওয়ার প্রভৃতি।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ধনীর প্রবাসী স্ত্রীকে বাগিয়ে বিয়ে করে উপরে ওঠার সিঁড়ি পাওয়ার পর নজরুল বিশ্বাস নিউ মার্কেট সিটি কমপ্লেক্সের মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হন। নিউ মার্কেট সিটি কমপ্লেক্সের অন্যতম অংশীদার ইস্রাফিল হোসেন। এই ইস্রাফিলের বাপ-দাদার ৭৮ জন শরিকের নামমাত্র অংশ বুঝিয়ে দিয়ে পুরো কমপ্লেক্সই দখল করে রেখেছেন নজরুল। ২২ তলার এই সিটি কমপ্লেক্সের ১৭টি তলায় রয়েছে ২৬৭টি আবাসিক ফ্ল্যাট। আর নিচের তলাগুলোতে দোকানঘর রয়েছে প্রায় ৭০০টি। কিন্তু নিউ মার্কেট সিটি কমপ্লেক্সে ভবণ নির্মাণের চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছুই প্রতারণা করেছেন নজরুল। আর প্রতিবাদ করলে ক্যাসিনো হোতা সম্রাটকে দিয়ে নাজেহাল করা হতো বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদকে দায়ের হওয়া অভিযোগ সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত কৃষক লীগের ১১১ সদস্যের তালিকায় নজরুল ইসলামের নাম নেই। গত বছরের ৩১ জুলাই নিয়মবহির্ভূতভাবে কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা নজরুল বিশ্বাসকে কৃষক লীগের নেতা বানিয়েছেন। এখানে কৃষক লীগের নেতা মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে নজরুল বিশ্বাসকে কৃষক লীগের সহসভাপতি করেছেন।

বিএনপি আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নজরুল ইসলামের ক্যাডার বাহিনীর হাতে হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়েছেন।

এছাড়া নজরুল বিশ্বাস তার গ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে একদিনে ১৭টি মামলাও করেন। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নজরুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। ওই মুক্তিযোদ্ধা ও ছেলেদের নামে তিনি ৯টি মামলা করেছেন।

বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নজরুল। তার বিরুদ্ধে জি কে শামীম ঠিকাদারসহ অবৈধভাবে ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকা্লের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে বিশ্বাস বিল্ডার্সের এমডি নজরুল বিশ্বাস বলেন, আমার অবৈধ কোনো সম্পদ নেই। এত অল্প সময়ে কীভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনেক বছর ধরে ব্যবসা করি। আমার যে সব সম্পত্তি তা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করেছি।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা নজরুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগটি অনুসন্ধান করছি। অনুসন্ধান শেষ হলে জানা যাবে তিনি দোষী না নির্দোষ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!