• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুধ চুরির নির্মম সত্য ও আরেকটি অপ্রকাশিত বাস্তবতা


ফেসবুক থেকে ডেস্ক মে ১২, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম
দুধ চুরির নির্মম সত্য ও আরেকটি অপ্রকাশিত বাস্তবতা

ঢাকা: গত ১০ মে রাজধানীর বাকি সড়কে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম বাচ্চার জন্য বাবার দুধ চুরির মত হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হন। এরপর তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তা সবার কাছে তুলে ধরলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পরে।

তিন মাস ধরে চাকরি না থাকায় সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে বাধ্য হয়ে সুপার শপ স্বপ্ন থেকে দুধ চুরি করেছিলেন বাবা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে তা ভাইরাল হবার পর ঘটনা নজরে আসে স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের। পরে তার নির্দেশে সেই বাবা ও সন্তানের দায়িত্ব নেবার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আর খোঁজ মিলছেনা সেই বাবার।

এদিকে এঘটনার পরে রাজধানীতে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনার স্বাক্ষী হলেন সময় টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মিজানুর রহমান খবির। তিনি এই বাস্তব ঘটনাটি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো।

“দুধ চুরির নির্মম সত্য ও আরেকটি অপ্রকাশিত বাস্তবতা:

বাচ্চা কোলে যে মাকে দেখছেন তিনি শৈশবে টাইফয়েডের কারণে অন্ধ হয়ে যান। এদেশের প্রথা অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী মানেই তুমি ভিক্ষার জন্য বের হও!! এই নারীও সে অপপ্রথার শিকার।

রমজানের ৪র্থ দিন শুক্রবার দুপুর শেষ হয়ে সদ্য বিকেলবেলা। বাংলামটরের পাশাপাশি কয়েকটি হোটেলের সামনে দাড়িয়ে কিছু বলছেন এ দু'জন।

বাড়িয়ে দেয়া বাটি শুন্যই ফিরছে। ইফতার বেচার হৈ-হুল্লোড়ে কেউই শুনছে না ওনার কথা। বড় মেয়েটিও মুখ বেজার হয়ে তাকিয়ে আছে ঐ ভোজ উৎসবের দিকে।

মাথায় টুপিওয়ালা ছ্যাপফালানো রোজাবাজ, বসের ইফতার কিনতে আসা গোয়ার কিসিমের কর্মচারী, পেটমোটা বাবুর্চি--সবাই যারযার মত ব্যস্ত!

আমি বিষয়টি লক্ষ্য রাখছি ফটোস্ট্যাটের দোকানের সামনে দাড়িয়ে। শেষের ছোট একটি হোটেলে এসেও কিছু চাইলেন মহিলা। যথারীতি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। 'ভাত' শব্দটি কানে আসতেই মনটা উসখুস করলো।

কোন করুণ বাস্তবতা কি আমিও এড়িয়ে যাচ্ছি!??
কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম ইতিহাস...

এনারা ক্ষুধার্ত!!!

অগনিত ইফতারবাজের ভিড়ে তার কথায় কেউই পাত্তা দেয়নি। তারা সকাল থেকে এ পর্যন্ত ভাত না খেয়ে ভিক্ষা করছেন দোকানে দোকানে। সকালে রুটি-কলা খাইয়েছেন একজন।

পর্দাঘেরা হোটেলের মধ্যে ভোজন করছেন অনেকে। বাইরেও সাজানো খাবার। তাদের দুটো পেটে দুটো দানা দেবার লোক নেই।

পরীক্ষা করার জন্য টাকা সাধলাম। না, তারা টাকা নেবেন না, একবাটি ভাত চান। কেবল একবাটি ভাত!!!! আগে ক্ষুধাটা শেষ করা দরকার।

ছোট হোটেলটি থেকে ভাত দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। হাতের বাটিতেই খাবেন তারা। না, দুটো প্লেট ও মুরগির মাংস ও ভাজির ব্যবস্থাও হল। হোটেলের ছোট এক কর্মী এবার নিজেই পানি নিয়ে গেল তাদের জন্য.... কিনে দেয়া হল ঠান্ডা পানিও।

এমন কত মানুষ আছেন রাস্তায়। শয়তান ভিখারীর ভিড়ে এমন কোনঠাসা মানুষও কম নন।

(গরমে হাটতে হাটতে এরা বেশি ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত। বাসাবো থেকে কাঁঠালবাগান এসেছেন, প্রায়ই আসেন তারা!!... একএলাকায় বারবার অনেকে ভিক্ষা দিতে চান না। বাসার গেট বন্ধ, দোকানই ভরসা। স্বামী প্যারালাইজড, তাই এটাই ইনকাম সোর্স।)

এদের নিয়ে কি ভাবছি আমরা?? একবাটি ভাত চাইতে চারটি হোটেলে কেন যাওয়া লাগবে?৫০ টি লোকের একশটি কান কি করে এড়ালো ভাতের আর্তি??

রোজাদার সেজে ইফতার কিনছে কতজন। কতজনই যাচ্ছে বড়বড় পার্টিতে।
একটা চপ বা মুড়ি ছোলাও কি ওদের বাটিতে পড়তে পারতো না??

রমজানের শিক্ষা অর্জন না করে ভণ্ড রোজা রেখে লাভ কি??


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!