• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুধে ভেজাল নিরূপণে হাইকোর্টের নির্দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯, ০৬:৪১ পিএম
দুধে ভেজাল নিরূপণে হাইকোর্টের নির্দেশ

ঢাকা: প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গো খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা এবং কীটনাশক সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা তা সনাক্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সারাদেশে জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

দুধে ভেজাল বিষয়ে সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ আদালতের নজরে আনা হলে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ (সোমবার) এই আদেশ দেন।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ের জরিপ প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদেশে খাদ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য সচিব, মন্ত্রিসভা সচিব, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সব সদস্য, কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর চেয়ারম্যানকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ হিসেবে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া গরুর দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যে ভেজাল রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত। একই সঙ্গে দুগ্ধজাত খাদ্য উৎপাদন এবং ভেজাল মেশানোর দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে আগামী ৩ মার্চ পরবর্তীর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গো খাদ্য, দুধ, দই ও বাজারে থাকা প্যাকেটের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) জরিপ চালায়।

এনএফএসএল সূত্র জানায়, এই গবেষণায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গাভির দুধ ও গো-খাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা শহরের বিভিন্ন নামি-দামি দোকান ও আশপাশের উপজেলা পর্যায়ের সাধারণ দোকান থেকে দই সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ। এগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

গবেষকরা জানান, প্রায় সব গো-খাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। রয়েছে সিসা ও ক্রোমিয়াম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গো-খাদ্যের ৩০টি নমুনা গবেষণা শেষে দেখা গেছে, এর মধ্যে কীটনাশক ২ নমুনায়, ক্রোমিয়াম ১৬টি নমুনায়, টেট্রাসাইক্লিন ২২টি নমুনায়, এনরোফ্লোক্সাসিন ২৬টি নমুনায়, সিপ্রোসিন ৩০টি নমুনায় এবং আলফাটক্সিন ৪টি নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা পাওয়া গেছে।

গাভির দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা এবং ৩ শতাংশ দুধে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় আলফাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৯৬ শতাংশ দুধের নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব।

প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে আছে টেট্রাসাইক্লিন। কিছু নমুনায় পাওয়া গেছে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন। একটি নমুনায় পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত সিসা। এ ছাড়া ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন অণুজীবের উপস্থিতি স্পষ্টত প্রতীয়মান।

গবেষণায় দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ সিসা পাওয়া গেছে। আর ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব।

এনএফএসএলের গবেষণায় দুধ ও দইয়ে যেসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেগুলো ক্ষতিকর কি না জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, শরীরে মাত্রতিরিক্ত সিসা, আলফাটক্সিন এবং কীটনাশক প্রবেশ করে তাহলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যানসারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাছাড়া অণুজীব থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে নানা ধরনের মারাত্মক রোগ।

খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে রোগ প্রতিরোধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কার্যকর হবে না। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আর রোগ সারানো সম্ভব হবে না।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!