• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুনিয়া উল্টে গেলেও উত্তরা ৯ নং সেক্টরের ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়!


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৪, ২০২০, ০২:১৮ পিএম
দুনিয়া উল্টে গেলেও উত্তরা ৯ নং সেক্টরের ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়!

ঢাকা : ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এতো এতো কিছু করছেন, প্রভাবশালী দখলদারদের হুশিয়ারি দিচ্ছেন কিন্তু উত্তরা ৯ নং সেক্টরের ফুটপাত তো দখলমুক্ত হলো না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়র ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিলেও এই সেক্টর তো ফুটপাত দখলমুক্ত হলো না। আবাসিক এলাকায় বাসা বাড়িতে বাণিজ্যিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে অনেকেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কিছু লোক ফুটপাত ও আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাসোহারার টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন আর অন্য দিকে মেয়রের যাবতীয় শ্রম বৃথা যাচ্ছে। এখন বলতেই হচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সেক্টর কল্যাণ সমিতি আর প্রশাসনের ক্ষমতা এখন ঢাকা উত্তর মেয়র আতিকুল ইসলামের চাইতেও বেশি। মনে হচ্ছে দুনিয়া উল্টে গেলেও উত্তরা ৯ নাম্বার সেক্টরের ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়! এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা ৯নং সেক্টরের এক স্থায়ী বাসিন্দা।

রাজধানীর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, কাগজে-কলমে আবাসিক হলেও বাড়ি বাড়ি গড়ে উঠেছে করপোরেট অফিস আর দোকান পাট। ফুটপাত দখল করেছে টং দোকান। কল্যাণের নামে কল্যাণ সমিতি করছে নিরব চাঁদাবাজি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট, চোরাই ব্যবসায়ীদের আনাগোনা, বখাটেদের আড্ডা আর কিশোর গ্যাংদের মারপিটের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত সেক্টরবাসী। ফলে আবাসিক সুবিধার আশায় উত্তরা ৯নং সেক্টরে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা বসবাসকারীরা পড়েছেন বিপাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশকে বারবার জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে দিন দিন বসবাসের আগ্রহ হারাচ্ছেন বাসিন্দারা। এখানে প্রতি রাস্তায় বাণিজ্যিক ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন আবাসিক বাড়ি ও প্লটে কাঁচাবাজার, মুদি-মনোহারি দোকান, খাবার হোটেল, রড-সিমেন্টের দোকান, মোটরগাড়ির শোরুম, ক্লিনিক, ওষুধের দোকান, গ্রিল ওয়ার্কশপ, ফার্নিচারের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

বাণিজ্যিক ব্যবহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯নং সেক্টর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল সংলগ্ন আবাসিক প্লটগুলো। এছাড়াও হাসপাতালের বাহিরে রাস্তার দুপাশে দাড়ানো থাকে শ’খানেক বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স। যায় ফলে এসব রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায় যানজট রয়েছে একই সেক্টরের রোড ১, ২, ৩, ৪ ও পানির ট্যাংকি এবং কল্যাণ সমিতির কার্যালয় সংলগ্ন আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক একাধিক প্রতিষ্ঠান। উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের দেয়াল ঘেসে ৪ নং রোডে গড়ে উঠেছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে পুরানো মালামাল কেনার ভাঙারির দোকানও।

৯নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির কিছু অসাধু গার্ডকে কমিশন দিয়েই চালাচ্ছে এই ব্যবসা। তাছাড়া ৯ নং সেক্টর কাঁচাবাজার ও আবদুল্লাহপুর সংলগ্ন বেশির ভাগ প্লটের বাণিজ্যিক ব্যবহার রয়েছে। তাই চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানিসহ বেড়েছে নানা অপরাধ।

উত্তরা ৯ নাম্বার সেক্টর কল্যান সমিতির এ ব্যাপারে কিছু করনীয় আছে কিনা, নিরাপত্তা কর্মীদের চাঁদাবাজির ব্যাপারে তারা অবগত কিনা জানতে উত্তরা ৯ নং সেক্টর কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এবিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

উত্তরা পশ্চিম থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন আলমগীর গাজী প্রতিবেদককের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা থানা পুলিশের দায়িত্ব না, সিটি কর্পোরেশন ফুটপাত দখলমুক্ত করলে পুলিশ তাদের সহযোগীতা করবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারো কিভাবে দখল হচ্ছে উত্তরার ফুটপাত, আর হলেও আপনারা (পুলিশ) কেন বসতে দিচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এই ব্যাপারে কোনো কিছু করার নেই। 

এর আগে উত্তরা ৯নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান বলেন, ফুটপাত ও আবাসিক ভবনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুক্ত করতে আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালীদের কারণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি কল্যাণ সমিতিকে প্রতিবারই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন। এক্ষেত্রে আমরা সিটি করপোরেশন ও রাজউকে জানিয়েছি। কিন্তু তারাও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।   

৯ নম্বর সেক্টরে কোনো খেলার মাঠ না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা সময় এখানে খেলা মাঠ ছিল। বর্তমানে সে জায়গা প্রভাবশালীদের বহুতল ভবন হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশনের নিকট বহুবার আবেদন করেছি মাঠ দখল মুক্ত করতে কিন্তু কার্যত কোনো লাভ হয়নি। আমাদের “উত্তরা এসোসিয়েশন” এর নামে দেড় কাঠার একটা ক্লাব ছিল সেটাও রাজউক নিয়ে গেছে।  

কল্যাণ সমিতির চাঁদাবাজি নিয়ে তিনি বলেন, কল্যাণ সমিতির সদস্যরা মাসিক হারে এলাকার ময়লা পরিস্কার করা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধে নাইট গাডদের ব্যয় মেটাতে চাঁদা নেয়। এটা প্রশাসন থেকে সবাই অবগত আছেন। 

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!