• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুবলার চরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ১৬ হাজার জেলে


প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট) ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮, ০২:৪৪ পিএম
দুবলার চরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ১৬ হাজার জেলে

ছবি : সোনালীনিউজ

বাগেরহাট : সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের জেলেপল্লীর প্রায় ১৬ হাজার জেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে জেলে পল্লীতে রয়েছে সুপেয় পানিসহ স্বাস্থ্যসেবা সংকট। দুর্গম সাগর মোহনার মোট ছয়টি চরে প্রতিবছর শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে নিয়োজিত এসব জেলে-বহদ্দারের দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের সুব্যবস্থা নেই। মাত্র পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে, যাতে সর্বাধিক ৫/৬ হাজার লোক আশ্রয় নিতে পারে। সাইক্লোন শেল্টারগুলো ২০০৭ সালের  ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে তা অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

জনবিচ্ছিন্ন চরগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। বালুময় চরে ছোট ছোট কূপ খনন করে পানি তোলে জেলেরা। শুঁটকি মৌসুমের পাঁচ মাস অবস্থানকালে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত ও দুর্ঘটনায় আহত হলে জোটে না তাদের চিকিৎসাও। জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করলেও সরকারিভাবে তাদের চিকিৎসাসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রতি মৌসুমে হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন থেকে বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, তার বড় অংশ আসে দুবলার চরের শুঁটকিপল্লী থেকে। জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির অধীনে আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শ্যালার চর, মেহের আলীর চর, নারকেলবাড়িয়াসহ সাগর মোহনার ছয়টি চরে শুঁটকি উৎপাদন হয়। প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে শুঁটকি উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। তা মার্চ মাস পর্যন্ত চলে। মৌসুমের শুরু থেকেই বাগেরহাটের শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, খুলনার দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা শুঁটকি তৈরির কাজ করে। এই শুঁটকি শিল্পকে ঘিরে দুবলার চরের ছয়টি চরে পাঁচ মাস ধরে চলে বিশাল কর্মযজ্ঞ। মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে নিয়োজিত জেলে ও তাদের সহায়ক বিভিন্ন পেশাজীবী মিলে শুঁটকি পল্লীগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার লোক অবস্থান করে। এ বছর ছয়টি চরে বন বিভাগ থেকে এক হাজার ২৫টি অস্থায়ী জেলেঘর নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আলোর কোল শুঁটকি পল্লীর লেদু বহদ্দার, অফিস কিল্লার শহিদুল মল্লিক ও শুকুর আলী মীর জানান, এ বছর ডায়রিয়া, আমাশয়সহ চরে পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। কূপ খনন করে যে পানি পাওয়া যায়, তা দিয়ে হাজার হাজার জেলের চাহিদা পূরণ হয় না। তাঁরা চরে পুকুর খনন, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপনের দাবি তাদের।

দুবলার চরের মৎস্যজীবীদের সংগঠন ‘দুবলা ফিশারমেন গ্রুপে’র সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বলেন,‘দুবলার চরের জেলেপল্লীতে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করছে জেলেরা। বিশেষ করে এখানে খাবার পানির চরম সংকট রয়েছে। এছাড়া পুকুরের পাড় ভেঙে সাগরের নোনা পানি ঢুকে পড়ায় তা আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বর্তমানে বালুর চরে ছোট ছোট কূপ খনন করে সামান্য পরিমাণ পানি তুলে কোনো রকম জীবন চলছে চরবাসীর।

ফলে এ বছর পেটের পীড়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বেশি।’ তিনি আরো জানান, চরে সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। জেলেরা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শুঁটকি মৌসুমে পল্লী চিকিৎসক নিয়ে আসে। তা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ সারলেও বড় ধরনের কিছু হলে সমস্যায় পড়তে হয়। দুর্গম সাগর থেকে দ্রুত কোথাও নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তা ছাড়া সাইক্লোন শেল্টারগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাতে মানুষ বসবাসের কোনো সুযোগ নেই। দুবলার শুঁটকিপল্লীই সুন্দরবনের রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস। তাই জেলেদের স্বার্থে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ও সুপেয় পানির জন্য পুকুর খননের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, দুবলার জেলেপল্লীতে বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়িসহ র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের ক্যাম্প রয়েছে। ছয়টি চরে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এগুলো সিডরের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবু দুর্যোগ মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয় জেলেরা। বন বিভাগের অফিস ভবনটিও বঙ্গোপসাগরে বিলীন হওয়ার পথে। তবে শুঁটকি মৌসুমে যাতে জেলেপল্লীতে সরকারিভাবে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!