ঢাকা : রাষ্ট্র এবং রাজনীতি নিয়ে শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই নন, ভাবেন নরসুন্দরও। জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি সুযোগ পেলে কমবেশি সবাই সাধ্যমতো আলোচনা করেন রাজনীতি নিয়ে।
ক্যাসিনো সম্রাট, মাদক সম্রাজ্ঞী, টাকার সিন্দুকের মতো ঘটনা আলোচনায় দেশ ভাসলেও আজকের দিনটিতে সর্বত্র আলোচনায় প্রধান্য পাচ্ছে মেডিকেল বোর্ড। দৃষ্টি এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দিকে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টার মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে আদালতে। এই প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার জামিন বা বিদেশে চিকিৎসার নির্দেশনা।
বিএনপির দাবি খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর। আবার বোর্ডের বক্তব্য— উল্টো। বিএনপির দাবির সঙ্গে বাস্তবে মিল নেই বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে বোর্ড। দুইয়ের বক্তব্যের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিস্তর ফারাক। সামনের প্রতিবেদনে কী আসছে? আদৌ কি জামিনাদেশ বা চিকিৎসার রায় আসবে? নাকি আগের মতোই ‘না’ বলে দেবেন আদালত? গত তিন দিন ধরে এমন আলোচনাই ঘুরপাক খাচ্ছে মুদি দোকান থেকে কূটনৈতিকপাড়ায়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডে প্রধান হিসেবে রয়েছেন বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া। অন্যরা হলেন— রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক
ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বরাবর আদালতেই তো বিচার প্রত্যাশা করব। করেও আসছি। আদালত বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। তারা (বোর্ড) তাদের রোগীর সঠিক ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরবেন। আমরা বাড়তি তো কিছু লেখার আশাও করি না। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বজনরা দেখেছেন তার অবস্থা খুবই খারাপ।
গত রোববার সবার দৃষ্টি ছিল আদালতের দিকে। বিএনপিসহ তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলের আশা ছিল খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে অন্তত কোনো একটা দিকনির্দেশনা পাবেন। হয়েছেও তেমনটি। ওইদিন আদালত মেডিকেল বোর্ডকে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
এর আগে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির দাবি জানিয়ে আদালতে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। গত ডিসেম্বরেও জামিন আবেদন করা হয়েছিল তবে আদালত তা খারিজ করে দেন।
২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। কারাগারে তিনি অসুস্থ হলে তাকে দ্বিতীয় দফায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালের ৬১২ নম্বর কেবিনে আছেন।
খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। তারা খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী নয়। নতুন করে কোনো ওষুধও খাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। ফলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
কিন্তু সরকার ও ক্ষমতাসীন দল তাকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে বারবার বলে আসছে। খালেদা জিয়ার দুই হাত বাঁকা হয়ে গেছে। অবস্থার অবনতি এবং বিশেষ শঙ্কা থেকেই খালেদা ও পরিবারের সর্বস্তরের সদস্য তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
অবশেষে যুক্তরাজ্যের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন খালেদা জিয়া। তার পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। সে মতেই আবেদন করেন আইনজীবীরা।
এদিকে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন দীর্ঘ দুই বছর মুখে বলে এলেও বাস্তবে কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি খালেদা জিয়ার দল। তাই পরিবার উদ্যোগ নিয়েছে। দলের তরফ থেকে পরিবারের উদ্যোগের কথা অস্বীকার করলেও ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ আছে। গত সোমবারও পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের সিনিয়র চার নেতা।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি চিকিৎসকদের কাছে দাবি করেছেন, চিকিৎসকদের ওপর তাদের পুরো আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। কোনো চাপে নয়, বাস্তবমুখী রিপোর্ট যেন দাখিল করা হয়। তাতেই খালেদা জিয়ার জামিন এবং বিদেশ যাওয়ার নির্দেশনা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল।
এর আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোনে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। ওবায়দুল কাদের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।
তবে অনুষ্ঠানিকভাবে তারা বলছেন, জামিনের এখতিয়ার আদালতের। সরকারের হাতে নয়। সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে।
আন্দোলনমুখী বিএনপি হঠাৎই শাসক দলের সঙ্গে শীর্ষ নেতার কাছে ফোন করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী গুঞ্জন ওঠে। কেউ বলে দলের দৈন্যদশার বহিঃপ্রকাশ আবার কেউ বলছেন, বিষয়টি রাজনৈতিক কৌশল বা রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :