• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক

‘দেউলিয়ার’ কাতারে আসছে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৩:২৬ পিএম
‘দেউলিয়ার’ কাতারে আসছে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা

ঢাকা : খারাপ সময় আসছে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের জন্য। পুরোপুরি ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থরা দেউলিয়া ঘোষিত হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে সরকারকে।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও থাকতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে ব্যাংকিং আইনসহ সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রীর কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে জানাবে।

এ ছাড়া ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ধরা সম্ভব হবে না। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের একটি বিশেষ গুণ হলো, এখানে কেউ আপিল করতে পারবে না। খেলাপিকে ধরা হবে। তার সব সম্পত্তি ক্রোক এবং দ্রুত সময়ে বিচার সম্পন্ন হবে।

সূত্র বলছে, ব্যবসা করতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত কারণে লোকসানে পড়েছেন এমন উদ্যোক্তাদের সব ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত সরকার। তবে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা করলেও যেসব ব্যবসায়ী ব্যাংকের দায় পরিশোধ করছেন না তাদের জন্য সামনে কঠিন সময়। এসব ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে।

এরপর তারা ব্যাংকের দায় পরিশোধ না করলে দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্যাংকের দায় আদায় করার বিষয়টি কীভাবে কার্যকর করা যায় তা নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হবে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধনের সুপারিশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একটি চিঠি দেয়।

জানা যায়, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের পাসপোর্টও নবায়ন কীভাবে আটকানো যায় সেটি বলা হবে। এসব ব্যক্তির নতুন কেনা জমি, ফ্ল্যাট ও গাড়িও রেজিস্ট্রেশন আটকে দিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধে পুরোপুরি অক্ষম হলে অর্থঋণ আদালত আইনে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করার বিধানও যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের দাবি আদায়সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য দুজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বিচারকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজন করার কথাও বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশে বন্ধকী সম্পত্তির যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করা ও নিলামে সম্পদ ক্রয়ের জন্য আলাদা অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। কোনো রিট পিটিশন এক আদালতে খারিজ হলে অন্য আদালতে দায়ের করার সুযোগ দিতে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও রিট খারিজের তথ্য গোপন রেখে অন্য বেঞ্চে রিট দায়ের করা হচ্ছে।

এসব বেআইনি রিটের সঙ্গে জড়িত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বার কাউন্সিলে লিখিত অভিযোগ করার সুপারিশও এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা যে রিট করেন, তা আরো ব্যয়বহুল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনের সংস্কার জরুরি।

অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩-এর সংশোধনের প্রস্তাবও এসেছে সুপারিশে।

এতে বলা হয়, অর্থঋণ আদালতে মামলা চলাকালে যেকোনো সময় বন্ধককৃত সম্পদ নিলামের আদেশ দিতে পারবে। সে ব্যবস্থা রেখে অর্থঋণ আদালত আইনও সংশোধন করা যেতে পারে।

অর্থঋণ আদালত প্রদত্ত রায়-ডিক্রি কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের ২৮ (৪) ধারা অনুযায়ী আলাদাভাবে মামলা না করে একই আদালত কর্তৃক স্বয়ংক্রিয়ভাবে জারি হয়ে যাওয়ার বিধান সংযুক্ত করা প্রয়োজন।

ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এ বিষয়ে আইন কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে পারে। খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলার ক্ষেত্রে মূল ঋণ ও সুদের অনুপাত সর্বোচ্চ ১:২ রাখার বিধান সংশোধন করতে প্রস্তাব তোলা হতে পারে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন কমিশন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক) ও বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিদের দীর্ঘ আলোচনায় দেশের ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান সংকট ও আইনি প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো ওঠে আসে।

খেলাপি ঋণ আদায়ে ৯ শতাংশ সরল সুদে ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য কয়েক দফা আবেদন করার সময়ও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে দেশে খেলাপি ঋণ বাড়বে না বললেও তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন আইন সংস্কার নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। তবে কি কি সংস্কারের প্রস্তাব থাকছে তা এখনোই বলা যাবে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!