• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে একসঙ্গে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রেকর্ড


আদালত প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০১৮, ০২:২৫ পিএম
দেশে একসঙ্গে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রেকর্ড

ঢাকা: বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে বিদ্রোহে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। যে ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়নি, তাদের মধ্যে চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে আটজনকে। একজন আগেই মারা গেছেন।

তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন। দু’দিন ধরে হাইকোর্টের দেয়া এই রায়ে বেশকিছু পর্যবেক্ষণও এসেছে। সেখানে তৎকালীন গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কথাও বলা হয়েছে। হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর এই রায় ঘোষণা করেন।

এদিকে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। তবে নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৩১ জওয়ানকে নতুন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন মোট যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ২০০ জনের সাজা বহাল রয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধের ইতিহাসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড এক নজিরবিহীন ঘটনা। ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ বেসামরিক নাগরিককে বিডিআর বিদ্রোহীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে যে জঘন্য অপরাধ করেছে তা খুবই মর্মান্তিক, বিভীষিকাময়, নারকীয় ও ভয়ঙ্কর। এই অপরাধ সভ্য সমাজের মানুষের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের (জওয়ানদের) অপরাধ বর্বরতা ও সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

রায়ে বলা হয়, মামলার তথ্য-প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকারকে উৎখাত করার গভীর ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা ছিল। ওই ষড়যন্ত্রে অভ্যন্তরীণ ইন্ধনের পাশাপাশি বাইরের যোগসূত্রও থাকতে পারে।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। দু’দিন ধরে এ রায় ঘোষণা চলে। ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর-এর সদর দফতর পিলখানায় জওয়ানদের বিদ্রোহে ৫৪ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০১৩ সালে হত্যা মামলাটিতে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনের ফাঁসির রায় দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এত বেশি সংখ্যক আসামির সাজা হাইকোর্টে অনুমোদন হলো।

রায়ে বিডিআর বিদ্রোহের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ডাল-ভাতের মতো কর্মসূচি বন্ধ, জওয়ানদের অভিযোগ থাকলে তা দ্রুত সমাধান করা, অফিসার ও জওয়ানদের মধ্যে পেশাদারিত্বের সম্পর্ক বজায় রাখাসহ সাত দফা সুপারিশ করেছেন আদালত। এছাড়া বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের গোয়েন্দা ইউনিট পূর্ব থেকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ায় কমিটি গঠন করে তদন্ত করতেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে বিডিআরের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৭ জন।

১৫২ জনকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের ওই রায় নিশ্চিতকরণে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জওয়ানের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৩৭০ কার্যদিবস ধরে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এই ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি চলে। শুনানি শেষে গত ১৩ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

সোনালীনিউজ/জেএ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!