• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে করোনা নিয়ে অবশেষে সেই ভয়ই সত্যি হলো!


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৩, ২০২০, ১০:৩৬ পিএম
দেশে করোনা নিয়ে অবশেষে সেই ভয়ই সত্যি হলো!

ঢাকা: কোরবানির ঈদ ঘিরে অবাধ যাতায়াত এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রভাব পড়বে আগস্টের মাঝামাঝিতে গিয়ে—বারবার এমন শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল আগে থেকেই। বিশেষজ্ঞদের এমন সতর্কবার্তার পাশাপাশি ঝুঁকি সামলাতে নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্যরাও। 

অধিক জোর দেওয়া হচ্ছিল স্বাস্থ্যবিধির ওপর। তবে সাধারণ মানুষ সেই পরামর্শে পাত্তা দেয়নি। প্রশাসনের জায়গা থেকেও দেখা যায়নি কার্যকর কঠোর পদক্ষেপ। ফলে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার না হতেই শঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।

প্রায় এক মাস ধরেই বিভিন্ন হাসপাতাল কিংবা বুথে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য কোনো ভিড় ছিল না। সেসব স্থানে আবার ভিড় জমতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও আগের মতোই ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। সিরিয়ালের জন্য মানুষ হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে। হন্যে হচ্ছে। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত দুই দিনের তথ্যেও। নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি বেড়েছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও।

ওদিকে নমুনা পরীক্ষায় চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে ফল নিয়ে বিড়ম্বনা। আগের মতোই ফল পেতে ৮-১০ দিন সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ নমুনা দেওয়ার এত দিন পর পজিটিভ ফল পেয়ে করণীয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে।

অন্যদিকে যারা এত দিন পর পজিটিভ ফল পেয়েছে, তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যাপারেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে না ঠিকমতো। সব মিলিয়ে আবারও নমুনা পরীক্ষা, ফল ও কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং নিয়ে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত সাত দিনের মধ্যে প্রথম পাঁচ দিন নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার থেকে ১৩ হাজার করে। ওই পাঁচ দিনে দৈনিক পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৯ থেকে ১২ হাজার ৮৪৯টি। এর পরই গত সোমবারের তথ্যে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩১৭টি। গতকাল বুধবারের তথ্যে জানানো হয়েছে, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৫০টি। এর মধ্যে মঙ্গলবার পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৮২০টি নমুনা এবং গতকাল করা হয় ১৪ হাজার ৭৫১টি নমুনা।

অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ আগস্টের সাপ্তাহিক প্রতিবেদন অনুসারে আগের সপ্তাহের (৩১তম) তুলনায় শেষ সপ্তাহে (৩২তম) বাংলাদেশে সংক্রমণ বেড়েছে ২.৫ শতাংশ। ওই প্রতিবেদন অনুসারে ঢাকার পাশাপাশি দেশের সব বিভাগেই ঈদের পর থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ঘটছে রংপুরে আর সবচেয়ে কম বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বরিশালে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের তিন দিনের বৃদ্ধিও বেশি বলে দেখানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই রেখাচিত্রে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষা বেড়েছে কোনো দাপ্তরিক সিদ্ধান্তের কারণে। আবার বিদেশগামীদের পরীক্ষার জন্যও সংখ্যাটা বেড়েছে। এ ছাড়া হাসপাতাল ও বুথে কিছু সংখ্যায় বেড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ল্যাবগুলোতে কিছু সমস্যা হওয়ায় নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হচ্ছে। সেগুলো কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ে আগে থেকেই এক ধরনের দুর্বলতা রয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর ঢাকায়ই দৈনিক গড়ে এক হাজারের মতো রোগী বেড়ে গেছে। আবার হাসপাতাল এবং বুথেও ভিড় বাড়ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে আশঙ্কা সত্যি হচ্ছে। তবে আমরা আগে থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে এই অবস্থা ঠেকানো যেত। তবে এখনো সংক্রমণের গতি ধীর রয়েছে। তাই সঠিকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এলাকায় এলাকায় নিতে পারলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমিয়ে রাখা যাবে।

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন হাজার ৫৫৭ জনে। একই সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৬১৭ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৬৯ হাজার ১১৫ জনে।

বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বুধবারের তথ্য
গতকাল বুধবারের (১২ আগস্ট) বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪ হাজার ৭৫১টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯৯৫ জনের মধ্যে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে।

শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যুর হার
বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ৮১৩ জন (৭৮ দশমিক ০৮ শতাংশ) এবং নারী ৭৪৪ জন (২০ দশমিক ৯২ শতাংশ)।

বৈশ্বিক সর্বশেষ
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর গোটা বিশ্বকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি আট লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা সাত লাখ ৪৭ হাজারের বেশি। তবে সুস্থ রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার প্রায়। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। আর এতে প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!