• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৯, ২০২০, ০৮:৫০ এএম
দেশে জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুইশ' ছাড়াল। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১৮ জনে পৌঁছাল। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত আরও তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এতে মৃতের সংখ্যা ২০-এ পৌঁছাল।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আর গত ৬ এপ্রিল ৩৫ জন আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা ১২৩ জনে পৌঁছায়। এর দু'দিন পরই তা দুইশ' অতিক্রম করে ২১৮ জনে পৌঁছাল। অর্থাৎ জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম সংক্রমণের ২৮ দিনের মাথায় একশ' অতিক্রম করা এই ভাইরাসে গত দু'দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ জন। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৫টিতে এরই মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, চীন থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশ ইতালি-স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে শুরুর দিকে দু-একজনের মাধ্যমে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। একটি পর্যায় পর্যন্ত আস্তে আস্তে বেড়ে হঠাৎ করে তা দ্বিগুণ তিনগুণ হারে বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বহুগুণ আকারে বেড়েছে। বাংলাদেশও সেদিকে এগোচ্ছে। প্রথম সংক্রমণের পর মার্চ পর্যন্ত দুই থেকে ছয়জনের মধ্যে সংক্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল। এপ্রিল থেকে তা বাড়তে থাকে। গত তিন দিনে তা জ্যামিতিক হারে বেড়ে দুইশ' ছাড়িয়ে গেছে। পরে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা এই জনস্বাস্থ্যবিদের।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিধি এখনও অপ্রতুল হওয়ার কারণে ভাইরাসটি ঠিক কত জেলায় ছড়িয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন এক হাজার পরীক্ষা-নিরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তা এখনও অর্জন করতে পারেনি। করোনার সার্বক্ষণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্বের যে ক'টি দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাংলাদেশ আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে।

প্রতি ১০ লাখে গাম্বিয়ায় ৩৪ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই সংখ্যা ২৬ জন। বাংলাদেশের নিচে থাকা নাইজেরিয়া, মিয়ানমার ও হাইতিতে ২৪ জন করে, ইথিওপিয়ায় ২২ জন, মোজাম্বিক ও মৌরিতানিয়ায় ১৪ জন করে এবং সবার নিচে পাপুয়া নিউগিনিতে ৮ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। সেখানে মাত্র এক হাজার পরীক্ষা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জিত হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিধি আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে সংশ্নিষ্টদের চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

যেভাবে বাড়ল আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা

প্রথম করোনা শনাক্ত, আক্রান্ত ৩ জন : দেশে গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ৫ : ১৪ মার্চ রাতে আরও দু'জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ৮ : ১৬ মার্চ আরও তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।

আক্রান্ত বেড়ে ১০ : ১৭ মার্চ আরও দু'জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।

প্রথম মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়ে ১৪ : ১৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমিত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ওই ব্যক্তি বিদেশফেরত একজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন। একই দিন নতুন করে আরও চারজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ১৭ : ১৯ মার্চ নতুন করে আরও তিনজন আক্রান্ত হন।

আক্রান্ত বেড়ে ২০ : ২০ মার্চ আরও তিনজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

মৃত্যু বেড়ে ২, আক্রান্ত বেড়ে ২৪ : ২১ মার্চ করোনাভাইরাসে দেশে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ওই ব্যক্তি বিদেশফেরত এক স্বজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন। নতুন করে আরও চারজন আক্রান্ত হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ২৭ : ২২ মার্চ আরও তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। প্রথম আক্রান্ত তিনজনের সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। আরও দু'জন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

মৃত্যু বেড়ে ৩, আক্রান্ত বেড়ে ৩৩ : ২৩ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা তিনজনে পৌঁছায়। ওইদিন নতুন করে আরও ছয়জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জনে পৌঁছায়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তিন পুরুষ এবং তিনজন নারী। আক্রান্তদের মধ্যে এক চিকিৎসক ও দু'জন নার্স।

মৃত্যু বেড়ে ৪, আক্রান্ত বেড়ে ৩৯ : ২৪ মার্চ আরও একজনের মৃত্যু হয়। ওইদিন মৃতের সংখ্যা বেড়ে চারজনে পৌঁছায়। একই সঙ্গে ওইদিন নতুন করে আরও ছয়জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জনে পৌঁছায়।

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ : ২৫ মার্চ প্রাণঘাতী করোনায় আরও একজনের মৃত্যুর খবর জানায় আইইডিসিআর। এ নিয়ে ওইদিন মৃতের সংখ্যা পাঁচজনে পৌঁছায়। তবে ওইদিন নতুন করে কারও শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। ওইদিন পর্যন্ত আক্রান্ত সাতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

আক্রান্ত বেড়ে ৪৪ : ২৬ মার্চ নতুন করে আরও পাঁচজন আক্রান্ত হন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ জনে পৌঁছায়। ওইদিন পর্যন্ত মোট ১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

আক্রান্ত বেড়ে ৪৮ : ২৭ মার্চ নতুন করে দুই চিকিৎসকসহ চারজন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। আক্রান্ত চারজনের মধ্যে দু'জন চিকিৎসক।

আক্রান্ত বেড়ে ৪৯ : ২৮ এবং ২৯ মার্চ পরপর দু'দিন দেশে করোনায় কোনো আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২৮ মার্চ আরও চারজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। ওইদিন পর্যন্ত ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। টানা দু'দিন পর ৩০ মার্চ নতুন করে একজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওইদিন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ১৯ জন।

আক্রান্ত বেড়ে ৫১ : ৩১ মার্চ আরও দু'জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ৫৪ এবং ও মৃত্যু ৬ : ১ এপ্রিল নতুন করে আরও তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওইদিন আরও একজনের মৃত্যু হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ৫৬ : ২ এপ্রিল আরও দু'জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া যায়।

আক্রান্ত বেড়ে ৬১ : ৩ এপ্রিল আরও পাঁচজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।

আক্রান্ত বেড়ে ৭০, মৃত্যু বেড়ে ৮ : ৪ এপ্রিল আরও ৯ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওইদিন আরও দু'জনের মৃত্যু হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ৮৮, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ : ৫ এপ্রিল ১৮ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওইদিন আরও একজনের মৃত্যু হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ১২৩, মৃত্যু বেড়ে ১২ : গত ৬ এপ্রিল আরও ৩৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।

আক্রান্ত বেড়ে ১৬৪, মৃত্যু বেড়ে ১৭ : গত ৭ এপ্রিল আরও ৪১ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য : গতকাল দুপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৩৩ পুরুষ এবং ২১ জন নারী। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ জনই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। একজন ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি উপজেলার বাসিন্দা। বাকিরা ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।

আগের দিন ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এলাকাভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করলেও গতকাল ডা. ফ্লোরা তা করেননি। একই সঙ্গে গত দু'দিন ধরে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ রাখা হয়নি। এতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশ করা তথ্য ছাড়া অন্য কিছুই জানার সুযোগ মিলছে না। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একে হেলথ বুলেটিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

এ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৯৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৬৩টি এবং ঢাকার বাইরে ৪২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৪ জনের। তাদের মধ্যে ২১৮ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!