• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না খুনিদের


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ১৫, ২০১৯, ১২:১৬ পিএম
দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না খুনিদের

ঢাকা : রেড অ্যালার্ট জারি, কূটনৈতিক তৎপরতা, নানাবিধ লবিং করেও বিদেশের মাটি থেকে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের।

পলাতক ছয়জন হলেন-আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। মানুষের জোর দাবি আছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার। সরকার জোর চেষ্টাও চালাচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি এখনো।

যে কারণে বিলম্বিত বিচার : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়।  জিয়াউর রহমান সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানা দেশে বড় বড় পদে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের মাটিতে অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলও গঠন করেন। হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলায় ২৪ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয় বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের ফাঁসি। পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা।

বাকি আসামিরা কে কোথায় : এদের মধ্যে চারজনের সম্ভাব্য অবস্থান হলো কানাডায় নূর চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাশেদ চৌধুরী। মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে ও শরিফুল হক ডালিম স্পেনে। এই ছয় খুনির মধ্যে দুজন কোন দেশে অবস্থান করছেন তার সঠিক তথ্য কেউই জানে না। এরা হলেন খন্দকার আবদুর রশিদ ও আবদুল মাজেদ। চারজনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়।

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রভাবশালী রাজনীতিক, ব্যবসায়ীদের দিয়েও নানাভাবে তদবির করা হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা গত ১০ বছর ধরে আসামিদের ফেরত দেব দিচ্ছি করে আশ্বস্ত করলেও সম্প্রতি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে আসামিদের ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়, আইন কভার করে না। অতিসম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা হয়।

সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে ওঠেন ‘ডোন্ট আস্ক মি ইউর রাশেদ চৌধুরী।’ এর মানে এই যে, বাংলাদেশ রাশেদ চৌধুরীর ব্যাপারে বারবার তাগিদ দেওয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর রীতিমতো বিব্রত। তারা রাশেদ চৌধুরীকে কোনোদিন বাংলাদেশে ফেরত দেবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।

কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরী, জার্মানিতে মোসলেম উদ্দিন ও স্পেনে অবস্থানরত শরিফুল হক ডালিমকেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে ফেরত দেবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। যেহেতু বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে দেশের কোটি কোটি মানুষ একাট্টা, তাই পাবলিক সেন্টিমেন্টকে মূল্যায়ন করতেই সরকার আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট। এতে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা যেন ঠিক থাকে, সেটা মাথায় রেখেই সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে।

এ ব্যাপারে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে রেড অ্যালার্ট জারি করে। এছাড়া সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর নানাভাবে চেষ্টা করছে আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। দেশের মানুষ চায় বঙ্গবন্ধুকে যারা সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি বাংলার মাটিতে কার্যকর হোক।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!