• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশে ভয়াবহ স্বৈরশাসন চলছে, জাতি আজ উৎকণ্ঠিত’


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২০, ২০১৮, ০৪:০৭ পিএম
‘দেশে ভয়াবহ স্বৈরশাসন চলছে, জাতি আজ উৎকণ্ঠিত’

ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, আর একদিন পরেই ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু মানুষের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।

তিনি বলেন, দেশে যে ভয়াবহ দুঃশাসন ও স্বৈরশাসন চলছে এর যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গোটা জাতি আজ আতঙ্কিত উৎকণ্ঠিত।

সোমবার (২০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘শুধু সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়ায় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কীভাবে জাল নথির ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার বন্দী করে রেখেছে। তিনি বার বার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও নতুন নতুন মামলা ও অজুহাত দেখিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসা না দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।

রিজভী বলেন, বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলার খড়্গ ঝুলছে। কারবন্দি আছেন হাজারো নেতাকর্মী। প্রতিনিয়ত চলছে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার নির্যাতন। এমন পরিস্থিতি আসন্ন ঈদ নিয়ে মানুষের মনে কোনো আনন্দ, নেই কোনো স্বস্তি।’

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, অবৈধ সরকারের দুর্নীতি, টাকা পাচার, লুটপাট, চাঁদাবজি, দখলবাজিতে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ দিশেহারা। বাড়িভাড়া বেড়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এরই মাঝে যোগ হয়েছে মামলা হামলাসহ নানা আতঙ্ক।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ন্যায় সঙ্গত ও যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে ন্যায্য দাবিতে প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা এখন কারাবন্দি। যদিও রোববার (১৯ আগস্ট) অনেকে জামিন পেয়েছে। কিন্তু এখনও বহু নিরপরাধ শিক্ষার্থী কারাগারে বন্দী। তাদের মাথার ওপর মিথ্যা মামলার খড়্গ ঝুলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীদের জামিন মেলেনি এখনও।

তিনি বলেন, কারাবন্দী এসব শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অভিভাবকদের আহাজারি আর কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অভিভাবকরা এক থানা থেকে আরেক থানা, এক আদালত থেকে আরেক আদলতে ছুটাছুটি করেও জামিন করাতে পারেননি তাদের প্রিয় সন্তানদের। অজ্ঞাত নামা মামলার নামে হাজার হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের ঘটনায় সারাদেশের অভিভাকরা অজানা আতঙ্কে আছেন।’

রিজভী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন কি অপরাধ? অন্যায়ের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করা কি অপরাধ? বেআইনি অস্ত্রে সজ্জিত হেলমেটধারী সরকারি দলের ক্যাডাররা ধাওয়া করে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে রক্তাক্ত করা কি ন্যায় সঙ্গত? আওয়ামী ক্যাডারদের হাতে আইন তুলে নেয়া কি বৈধ কাজ? তাদের নামে মামলা হলো না কেন! তারা কেন গ্রেফতার হলো না! তাদের রিমান্ডে নেয়া হলো না কেন! তারা কেন এখন কারাগারে নেই! মনে হয় সরকারি দলের ক্যাডারদের প্রকাশ্যে সহিংস সন্ত্রাসের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে । সে কারণে তারা আইনের ঊর্ধ্বে। সেজন্যেই প্রধানমন্ত্রী নিজ দলীয় ক্যাডারদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। অথচ তিনি আহত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের দেখতে যাওয়ার সময় পাননি!’

তিনি বলেন, ‘শুধু কিছু সংখ্যক আওয়ামীপন্থী লোক হয়তো তাদের নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে, কিন্তু বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, দেশের সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধরাণ শিক্ষার্থী, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এখন অবৈধ সরকারের নানা বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত, ক্ষতবিক্ষত। এতদিন শুধু বিএনপি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, জেল-জুলুম, অপহরণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নির্যাতন-নিপীড়নের খড়্গ চলছিল। এখন সাধারণ মানুষও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না ’

রিজভী বলেন, ‘যদিও এটি কোরবানির ঈদ। তবু বিগত দিনগুলোতে কোরাবানির ঈদেও রাজধানীসহ সারাদেশের মার্কেটগুলো ঈদের আগে জমজমাট থাকত। এক দশকের মধ্যে ঈদ বাজারে এমন মন্দাভাব আগে কখনও দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে ঈদের সামগ্রী তুলে বিপাকে পড়েছেন। বেচা-বিক্রি বন্ধ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার জন্য ঘরমুখো মানুষরা প্রচণ্ড দুর্দাশার মধ্যে পড়েছে। এ হলো দেশের বর্তমান অবস্থা। এ দুঃশাসনের অবসান ছাড়া দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না, মিলবে না স্বস্তি। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, সত্যিকারভাবে মানুষ তার পছন্দ অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারলেই কেবল এ জাতির মুক্তি মিলবে।

তিনি খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটককৃত সকল শিক্ষার্থী এবং ড. শহিদুল আলমসহ সকল শিল্পী কুশলীদের মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থি ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!