• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশের নির্মিত হয়েছে ‘দীর্ঘতম’ বাঁশের সাঁকো


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জুলাই ৭, ২০২০, ০৫:০৮ পিএম
দেশের নির্মিত হয়েছে ‘দীর্ঘতম’ বাঁশের সাঁকো

ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জ: প্রযুক্তি এখন এগিয়ে গেছে অনেক দূর। চলাচলের সুবিধার্থে নদ-নদী, খাল-বিলের ওপর নির্মিত হয়েছে দারুণ সব সেতু। কিন্তু সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার প্রত্যন্ত রানিপুরা গ্রামের বাঁশের সাঁকোটি নান্দনিকতায় কোনো অংশে কম নয়। সাঁকোটি দেশের দীর্ঘতম বলে দাবি স্থানীয়দের। স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত এ সাঁকোর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৩৩ ফুট।

সাঁকো নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের দাবি, বাঁশের তৈরি এ সাঁকো জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের যেকোনো বাঁশের তৈরি সাঁকোর চেয়ে দীর্ঘ।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই ডুবে যায় বেলকুচি উপজেলার যমুনা নদী পরিবেষ্টিত রানিপুরা, মনতলারচর, চর আগুরিয়া, মূলকান্দি, বেলির চরসহ এ অঞ্চলের অন্তত ১০টি গ্রাম। যমুনা নদীর পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিবন্দি মানুষের তখন যোগাযোগের একমাত্র ভরসা কলাগাছের ভেলা আর কয়েকটি নৌকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।

বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আনিসুর রহমানকে। তাঁর এ ভাবনাকে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসেন গ্রামের উদ্যমী কয়েকজন যুবক। তাঁদের এ উদ্যোগকে সমর্থন জানায় গ্রামবাসীও।

গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে সাঁকোর কাজ শুরু করা হয়। এলাকার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ৭০টি পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩০০ টাকা করে চাঁদা।

মূল উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘চরাঞ্চলের শ্রমজীবী অভাবী মানুষ আর শিক্ষার্থীদের বর্ষা মৌসুমের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই আমি এমন উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রামবাসী সহায়তা না করলে দীর্ঘ এ সাঁকো নির্মাণ করা সম্ভব হতো না।’

আনিসুর রহমান আরো বলেন, ‘সাঁকোটি নির্মাণ করতে বাঁশসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা। গ্রামের পাঁচ যুবক আর গ্রামবাসী মিলে দিয়েছে স্বেচ্ছাশ্রম। তারই ফসল এ দীর্ঘ সাঁকো।’

গ্রামের নূর আলম, শহিদুল ও আবদুল লতিফ জানান, ১৯৮৮ সালের পর যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় জেগে ওঠে দীর্ঘ চর। তবে মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত যমুনার শাখা নদী এখনো বয়ে চলেছে। বর্ষা মৌসুমের চার মাস এ অঞ্চল পানিতে ডুবে থাকায় অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। দুর্দশাগস্ত গ্রামবাসীর কষ্ট লাঘবে তাঁদের এ প্রচেষ্টা। তাঁরা আরো বলেন, এই সাঁকো নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। এ সাঁকো দিয়ে চলাচলের কারণে এখন আর তাদের বুকপানি সাঁতরে পাকা সড়কে উঠতে হচ্ছে না।

এমন উদ্যোগের জন্য আনিসুরসহ গ্রামবাসীর প্রশংসা করে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত এ সাঁকো নির্মাণ দেশের জন্য একটা মডেল হতে পারে। শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে, গ্রামবাসীর ছোট ছোট সমস্যা যে অনায়াসেই সমাধান করা যায় রানিপুরার গ্রামবাসী সে দৃষ্টান্ত রেখেছে।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!