• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় বছরের মধ্যেই গাড়ি চলবে পদ্মা সেতুতে


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৩:৫৩ পিএম
দেড় বছরের মধ্যেই গাড়ি চলবে পদ্মা সেতুতে

ঢাকা : প্রায় সপ্তাহেই যাওয়া-আসা মিলিয়ে দুবার পার হতে হয় পদ্মা। শীতে নদী শান্ত থাকে বলে স্পিডবোট বা লঞ্চেই পার হয়ে যান। কিন্তু বর্ষায় প্রমত্ত পদ্মায় যে উন্মত্ততা থাকে তাতে আর লঞ্চ বা স্পিডবোটে ওঠার সাহস হয় না ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার মালিগ্রামের কামাল মিয়ায়। ফেরিই তখন ভরসা।

তবে ফেরিতে পারাপারের সময় বেশি লাগে বলেই কখনো নিয়ে নেন ঝুঁকি, জীবন হাতে করেই চড়ে বসেন লঞ্চ কিংবা স্পিডবোটে। গেল কয়েক বছর ধরেই প্রমত্ত পদ্মা পাড়ি দেওয়ার সময় তাকিয়ে থাকেন নদীর বুকে জেগে ওঠা টুকরো স্বপ্নের (পদ্মা সেতুর বিভিন্ন অংশ) দিকে। আর অপেক্ষায় প্রহর গোনেন কবে পূর্ণ কাঠামো পাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর? কবে সেই সেতু দিয়ে তাকে নিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটবে গাড়ি? ঝুঁকি নিয়ে আর পার হতে হবে না ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’।

বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (সেতু) দেওয়ান মোহাম্মাদ আবদুল কাদের জানালেন আর দেড় বছরের মধ্যেই শেষ হতে যাচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করলে ২০২০ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে সেতুর সব কাজ। আর তারপরই শুরু হবে সেতু দিয়ে যান চলাচল।

দেওয়ান মোহাম্মাদ আবদুল কাদের বলেন, সেতুর নকশার কাজ সবই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। নকশা নিয়ে আর কোনো জটিলতা হবে না। এখন দ্রুতই সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, মূল সেতুর ৬৩ শতাংশের বেশি কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি যে কাজ তার বেসিক (ভিত্তি) কাজও ইতোমধ্যে প্রায় সবই শেষ হয়েছে। পিয়ারের জটিলতা কেটে গেছে। এখন দেখতে দেখতেই পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে পদ্মা সেতু। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসেই ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারে আরো একটি স্প্যান বসানো হতে পারে।

গেল বুধবারও সরেজমিনে দেখা গেল কামাল মিয়ার মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে এগিয়েছে অনেকটাই। গত বুধবার সেতুতে যুক্ত হয়েছে আরো একটি স্প্যান। এ নিয়ে জাজিরা অংশে সেতুটি দৃশ্যমান হলো ৯০০ মিটার অংশ। আর দুই প্রান্ত মিলিয়ে দৃশ্যমান দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের এই সেতুর ১০৫০ মিটার অংশ।

বুধবার পর্যন্ত সেতুর ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর এর ৫টি স্প্যান বসানো হয়। এর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। বুধবার ষষ্ঠ স্প্যানটি বসানোর পর সেতুটির ওই অংশে ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।

আর মাওয়া প্রান্তে সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারের ওপর আরেকটি স্প্যান বসানো হয় গত বছর। তবে সেটি তৈরি করা হয়েছে ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ারে বসানোর জন্য। কিন্তু নকশা জটিলতায় ওই দুটি পিয়ার তৈরি না হওয়ায় এবং ওয়ার্কশপে জায়গা না থাকায় অস্থায়ীভাবে সেটি ৪ ও ৫ নম্বর পিয়ারে তুলে রাখা হয়। এখন নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ায় ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ার তৈরি হলে স্প্যানটি সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী সেতুর কাজের অগ্রগতি নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে গতকাল বলেছেন, এখন আর পদ্মা সেতু নিয়ে বড় কোনো সমস্যা নেই। সব পিলারের নকশা ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কাজ হলো নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করা। আশা করা যায়, ২০২০ সালের প্রথমার্ধে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

সেতু বিভাগের আরেক প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর জানান, নকশাজটিলতা কাটানোর পর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইল বসানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেখানেই শিগগিরই অপেক্ষায় থাকা স্প্যানটি বসানো হবে। আর কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে অপেক্ষায় আছে আরো স্প্যান। তিনি জানান, সেখানে ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরো ১৮টি স্প্যান। সম্পূর্ণ হওয়া এই ৩৫টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে ১৯টি স্প্যান। বাকি ১৬টি স্প্যান পথে রয়েছে বা চীন থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

মূল সেতুর মোট পিয়ার ৪২টি। এর মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান রয়েছে। যার ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে আরো ১১টি খুঁটি। ৬, ৭, ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর এই পাঁচটি খুঁটিতেই পাইল বসেছে ৩টির বেশি। ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে। আর ২৮ জানুয়ারি থেকে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরো ৪টি করে খাঁজকাটা কাটা পাইল বসানো শুরু হচ্ছে। বাকি ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩০ খুঁটিতেও খাঁজকাটা পাইল বসানো হবে।

নদীতে ৪০টি খুঁটির মোট ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৯২টি পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলোর টম সেকশন হবে।

স্প্যানের মতো পিলার নির্মাণের কাজও বেশ দ্রুত চলছে। পিলার ও স্প্যানের পাশাপাশি সেতুতে রেলপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। ইতোমধ্যে দুটি রেলওয়ের স্ল্যাব বসানো হয়ে গেছে। এ মাসেই শুরু হবে ২২ মিটার প্রস্থের রোড ওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!