• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত বিকশিত হচ্ছে প্লাস্টিকের বাজার


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩১, ২০১৯, ০৫:২৯ পিএম
দ্রুত বিকশিত হচ্ছে প্লাস্টিকের বাজার

ঢাকা : সহজে বহনযোগ্য, দামে সাশ্রয়ী, সুদৃশ্য রকমারি ডিজাইন এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখার কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে। ব্যাপক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে প্লাস্টিকের বাজার।

দেশের সার্বিক উন্নতির ফলে গার্মেন্ট ও ওষুধসহ সব ধরনের পণ্যে এখন প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। দেশে কাঠের বিকল্প ফার্নিচার হিসেবে প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে এখন টেবিল-চেয়ার থেকে শুরু করে গৃহে ব্যবহারের সামগ্রীও  উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য ব্যবহারে দিন দিন জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, মানুষ যতই আধুনিক হবে ততই সব কিছুতে প্যাকেটজাতকরণ পদ্ধতির চাহিদা বাড়বে। যার ফলে দেশ-বিদেশে প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা আরো বাড়বে। আশার খবরটি হলো দেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে প্রতিবছর ২৫ হাজার কোটি টাকার। আর এই বিশাল বাজারের সুবাদে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। তার চেয়েও ভালো আরেকটি খবর হচ্ছে দেশ ও দেশের বাইরে প্রতিবছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে এই শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কেরানীগঞ্জ ও আড়াইহাজারে সরকারের সহযোগিতায় গড়ে তোলা হচ্ছে দুটি প্লাস্টিক শিল্পনগরী। দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে প্লাস্টিক শিল্প ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইপিইটি)।

ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে রেজিস্টার্ড প্রায় দেড় হাজার প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। দেশে মাথাপিছু প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হচ্ছে গড়ে ৫-৬ কেজি। আশা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিমাণ প্রায় ৩৪ কেজিতে উন্নীত হবে। দেশের পাঁচ হাজার প্লাস্টিক কারখানায় ১২ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সরকার এই খাত থেকে প্রতিবছর সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকেন।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) এর নির্দেশনা মতে প্লাস্টিক শিল্প শ্রমঘন শিল্প। শ্রমঘন হওয়ায় প্লাস্টিক শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবহারের ক্ষেত্র বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যোগ হচ্ছে উৎপাদনের নতুন নতুন মাত্রা। ফলে বাড়ছে নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। এ শিল্পের উৎপাদন, রফতানি প্রক্রিয়া, বিপণন ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখের বেশি জনশক্তি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। প্লাস্টিক শিল্প এখন একটি সম্ভাবনার নাম। প্লাস্টিক কখনো বর্জ্য পণ্য হয় না। রিসাইক্লিং করে আবার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই সাশ্রয়ী, সহজ ব্যবহারযোগ্য, কম ঝুঁকি, ডিজাইন, টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন নকশার কারণে আধুনিক জীবনযাপনের সঙ্গী হয়ে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক সামগ্রী এখন বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, পোশাক শিল্পের পরই প্লাস্টিক শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় রফতানি খাত হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। রফতানি খাতে প্লাস্টিক পণ্যের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। রফতানিতে ১২তম অবস্থানে থাকা প্লাস্টিকপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, এশিয়ার চীন, ভারত ও নেপালেও রফতানি হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার ৫৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। যাতে বাংলাদেশের অবদান ০.০৬ শতাংশ। ভবিষ্যতে ৩ শতাংশ অর্জনের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরের মোট রফতানির ১ দশমিক ৪১ শতাংশ এসেছে প্লাস্টিক খাত থেকে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের  মোট রফতানির ১ দশমিক ৬৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিপিজিএমইএ’র তথ্য মতে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরের প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয়েছে ১০৭ দশমিক ২৯ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬০০ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার। রফতানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্লাস্টিক খাতের রোডম্যাপ, নগদ ছাড়, পৃথক শিল্পনগরী, প্যাকেজিং আইন, রফতানিতে প্রণোদনা ও কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা চান এই খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।

এ শিল্পের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সাল থেকে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ শিল্পের প্রায় ৯৯ শতাংশই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। এরমধ্যে প্লাস্টিক কারখানার ৮০ ভাগই পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। বর্তমানে ২০-২৫টি কোম্পানি বিদেশে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি করছে। কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো ১০০-১৫০টি ইন্ডাস্ট্রি এই পণ্য রফতানি করবে।

চলতি অর্থবছরেও প্লাস্টিক পণ্য থেকে দশ কোটি ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অথচ একদশক আগেও কম মূল্যের প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। এখন গার্মেন্ট এক্সেসরিজ হিসেবে হ্যাঙ্গার, বোতাম, পলিব্যাগ, ফিল্ম ব্যাগ, ক্লিপ ইত্যাদি প্রধানত আমেরিকা, কানাডা ও রাশিয়ায় প্রতিবছর ৭৫০ কোটি টাকার প্লাস্টিকপণ্য রফতানি হয়।

এ ছাড়া আরো প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ওপর প্লাস্টিকের খেলনা, ফার্নিচার, ক্রোকারিজ সামগ্রী সরাসরি রফতানি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, পণ্য বহুমুখীকরণসহ সরকার বিভিন্ন ধরনের নীতি-সহায়তা দিলে প্লাস্টিক পণ্যের রফতানি আয় ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।

আশার খবর হলো চীনের পর খেলনা সামগ্রী উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শিশুদের খেলনা ও হাউজহোল্ড (গৃহস্থালি) আইটেমসহ পাঁচ ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের দেশ-বিদেশে নতুন বাজারের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!