• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ তো আমার মা-বোন হয়নি, তাহলে কেন প্রতিবাদ করব?


উৎসব সরকার জানুয়ারি ২, ২০১৯, ০৭:৩৭ পিএম
ধর্ষণ তো আমার মা-বোন হয়নি, তাহলে কেন প্রতিবাদ করব?

ছবি: সংগৃহীত

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। দল যার যার দেশ সবার। এটা কি শুধু মুখে মুখে? আপাত দৃষ্টিতে তাই মনে হচ্ছে। আগে পরে ১৭টি তাজা প্রাণ ঝড়ে গেলেও, অত্যন্ত সুন্দর, সাজানো, গোছানো সুশৃঙ্খল ও সহিংসতা মুক্ত একটি নির্বাচন উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম সেটিই বলেছে। তবে নোয়াখালীর সূবর্ণচরের একটি ঘটনা ভেজাল বাঁধিয়ে দিয়েছে। সেটি নিয়ে মিডিয়াতে তেমন হৈ চৈ না হলেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সুশান্ত উৎসব (উৎসব সরকার) নামের এক তরুণ ক্রীড়া সাংবাদিক এক আবেঘন পোস্ট দিয়েছেন। সোনালীনিউজ-এর পাঠকের জন্য সেই পোস্টটি হুবাহু তুলে ধরা হলো।  

রক্ত চেয়ে মাঝে মধ্য পোস্ট দেই। খুব কম মানুষই তাতে সাড়া (লাইক, কমেন্টস, শেয়ার) দেয়। অনেকেই এড়িয়ে যায়। লাইক, কমেন্টস, শেয়ার দিলে যদি নিজেকেও রক্ত দিতে হয় হয়তো এমনটা ভেবেই এমন পোস্ট এড়িয়ে যাওয়া। কারণ রক্ত তো আর আমার বা আমার পরিবারের কারো জন্য লাগছে না।

ঘরের বাইরে বেরুলেই অনেক নারীকেই ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। হয়তো আমার সামনেও হয়। আমি দেখি। হয়তো মজাও পায়! ক্ষুধার্ত কালেভদ্রে অপরের খাওয়া দেখেও তো শান্তি পায়। অথচ প্রতিবাদ করি না। কেন জানেন, সে মেয়েটি তো আমার কেউ হয় না। মানে মা, বোন, বউ ইত্যাদি!

বাস ভাড়া আমি দিলাম ১০ টাকা। কন্ট্রাকটার কিছু বলল না। অথচ আমার পাশে যাত্রীর কাছ থেকে ১৫ টাকাই নেবে। তিনি ১০ টাকা দেওয়ায় বাসের কন্ট্রাকটার খারাপ ভাষা ব্যবহার করলেন। আমি প্রতিবাদ করলাম না। করব কেন? আমার থেকে তো আর ১৫ টাকা নেয়নি।

রক্ত আমার জন্য লাগবে না। ইভটিজিংয়ের শিকার তো আর আমার মা, বউ, বোন হয়নি। ভাড়া তো আর আমার থেকে বেশি নেয়নি। তাহলে কেন প্রতিবাদ করব? কেন?

আমাদের অবস্থা ঠিক এমন। যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ঘরে আগুন না লাগছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা চুপচাপ থাকি। প্রতিবেশীর ঘর পুড়ছে, পুড়ুক না। আমরা ঘরে বসে দেখি আর মজা নেই।

প্রতিবাদ কখন করি জানেন? আমার আজ রক্ত লাগবে। পোস্ট দিলাম। কেউ তো শেয়ার দিল না। রক্ত ম্যানেজ হয়নি। সংকটাপন্ন অবস্থা। তখন বিপ্লবীর মতো বলি, কেউ রক্ত দিল না। এ দেশ আমার না। মানুষ সব খারাপ।

আমার মা, বোন, বউকে কেউ যদি বিরক্ত করে তখন প্রতিবাদ করি। কেউ এগিয়ে না আসলে তখন বলি, বিপদের সময় কাউকে পাশে পেলাম না। এরা আমার কেউ না।

আমার থেকে ফুল বাস ভাড়া নিলে তখন ঠিকই কন্ট্রাকটারের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ি।

মূল কথায় আসি। নোয়াখালির সুবর্ণচরে ওই মায়ের সঙ্গে যে ধর্ষণের ঘটনাটা ঘটেছে তা যদি আপনার পরিবারের কারো সঙ্গে হতো তখনও কি আপনি নীরব থাকতেন? যদি নীরব থাকতেন তাহলে কিছু বলার নেই। যদি প্রতিবাদ জানাতেন তাহলে বলব, প্রতিবাদ করুণ। সময় এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও গণধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি...

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!