• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধাতব মুদ্রা সংকট: মূল কারণ ‘অচল’ হয়ে য


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৫, ২০১৬, ০৯:৩৮ পিএম
ধাতব মুদ্রা সংকট: মূল কারণ ‘অচল’ হয়ে য

বিশেষ প্রতিনিধি

অচল হয়ে যাওয়ার গুজবে ধাতব মুদ্রা লেনদেনে জটিলতায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। লেনদেনে সর্বনিম্ন মুদ্রা ৫ টাকা করা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা এবং ধাতব এ মুদ্রা গ্রহণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনিহায় বাজারে ধাতব মুদ্রা অচল হয়ে যাওয়ার গুজবের ভিত্তি তৈরি হয়। এ গুজব সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয় অসাধু কিছু মানুষ। ব্যবহার কমে যাওয়ায় ধাতব মুদ্রা প্রচলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হওয়ার উপক্রম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখি উদ্যোগেও এ মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানো যাচ্ছে না। জানা যায়, সাধারণ মানুষের ধাতব মুদ্রা ব্যবহারে অনীহা এবং অন্যদিকে মুদ্রা বিনিময়ে তফসিলী ব্যাংকগুলোর গড়িমসি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফেলে দিয়েছে বিপাকে। কারণ সাধারণ মানুষের কেনাকাটার সময় এক-দু’টাকা ছেড়ে দেয়া অভ্যাস, লোভী ব্যবসায়ীদের কয়েনের ব্যবহার রোধ করে চকলেট ব্যবসা, অর্থমন্ত্রীর কয়েন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য, ব্যাংকগুলোর কয়েন নিতে গড়িমসির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু দেশের বিভিন্ন স্থানে গুজব রটিয়ে দেয় কয়েন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা অবৈধ বলে। যার ফলে তৈরি হয়েছে কয়েন সঙ্কট। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, ধাতব মুদ্রা নিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে আসলে গুজব থেকে। একটি মহল বাজারে মুদ্রা চলবে না এরকম একটি ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার ফলেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকগুলো একেবারে মুদ্রা নিচ্ছে না বিষয়টা এমন না। তাদের কাছে যখন একেবারে বেশি মুদ্রা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন তারা সময়ের কারণে ফিরিয়ে দিচ্ছে। তবে তারা যাতে গ্রাহককে ফিরিয়ে না দেয় তা আমরা বাধ্যতামূলক করার জন্য সার্কুলার জারি করে নির্দেশনা দিয়েছি। সঙ্কট যেহেতু কাটছে না, তাহলে কি মুদ্রা বন্ধ করে দিতে হবে? এমন প্রশ্ন করলে মুখপাত্র বলেন, না বিষয়টা এরকম নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অনেক ছোট ছোট মুদ্রা ব্যবহার করে থাকে। আমাদের আসলে সচেতনতার অভাব। এখানে কোনো ধাতব মুদ্রা বন্ধ করা হয় নাই। কারো কাছে এক দুই টাকার মুদ্রা থাকলে সেটি মূল্যমান হারাবে সেরকম নয়। যার কাছে কয়েন রয়েছে সেটাকে অবৈধ মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা যথাযথ বিনিময় মূল্য পাবেই। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আসলে কয়েন নিচ্ছি না বিষয়টা এমন নয়। আমাদের একটু লিমিটেশন রয়েছে। কাউন্টারে বসা একটি কর্মকর্তা চাইলেই তার সব কাজ ফেলে দিয়ে শত শত মুদ্রা নেয়ার জন্য সময় বের করতে পারে না। কারণ এগুলো গণনা করতে বেশ সময় লেগে যায়। সে সময়ে অনেক গ্রাহককে বিদায় করা সম্ভব। এ থেকে উত্তরণের উপায় কি জানতে চাইলে শুভংকর সাহা বলেন, আমরা ব্যাংকগুলোকে বলে দিয়েছি তারা কয়েন না নিলে জরিমানা করা হবে। আর যেটি সবচেয়ে বড় বিষয় তা হলো গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। এটি মনে করার কোনো কারণ নেই, এক টাকার কয়েন বলে আমরা সেটাকে দোকানদারকে এমনি এমনি দিয়ে আসবো। সেটা দোকানির কাছ থেকে আদায় করতে হবে। অর্থাৎ তাদেরকে মুদ্রা ব্যবহার করতে হবে। মুদ্রা ব্যবহার করলেই সঙ্কট কেটে যাবে। এর জন্য আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করবো। যাতে করে গ্রাহকরা কোনোভাবেই দোকানীকে এক-দু টাকা ছেড়ে না দেয়। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ধাতব মুদ্রা অচল হওয়ার গুজব ছড়িয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কম মূল্যে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মুদ্রা নিয়ে জমা করছে এবং সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসে যথাযথ বিনিময় মূল্য নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বাজারে মুদ্রা ব্যবহার কমে যাচ্ছে। আর আগে থেকে সামান্য পরিমাণে থাকলেও অর্থমন্ত্রীর মুদ্রা অবৈধ বলে বক্তব্যের পর মানুষ কেনাকাটা করে দোকান থেকে দু-এক টাকার নোট ফেরত নেয় না। দোকানিও এক টাকা নাই বলে চালিয়ে দেয়। তবে বেশিরভাগ দোকানিই ক্যান্ডি দিয়ে গ্রাহককে বিদায় করে। কেউ যদি তর্ক করে তবে দোকানি জানিয়ে দেয় এক টাকার নোট নাই; একটা চকলেট নিয়ে যান। ছাড় দেয়ার মানসিকতা চলতে চলতে এটি সাধারণ মানুসের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সুযোগটা পুরোদমে কাজে লাগিয়েছে দোকানিরা। তারা শুরু করে দিয়েছে টাকা ফেরত দেয়ার বদলে লাভজনক চকলেট ব্যবসা। সংকুচিত হয়ে গেছে এক টাকা দু’টাকার কয়েনের লেনদেন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সচিবালয়ে একটি বক্তব্য প্রদান করেন। তখন ৫ টাকার নোটকে সরকারিকরনের একটি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। যে সময় তিনি বলেছিলেন, এক ও দুই টাকার নোট থাকবে না। এগুলো বাজার থেকে তুলে নেয়া হবে। এক-দু’টাকা দিয়ে কিছু পাওয়া যায় কি না তা নিয়েও তিনি তখন প্রশ্ন তুলেন। তার এ বক্তব্য সারাদেশজুড়ে ব্যপক সমালোচিত হয়। পরের দিন তিনি অবশ্য সুর পাল্টে বলেছিলেন, এক ও দুই টাকার মুদ্রাগুলো বাজারে থাকবে; এখনই উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে না। তবে যখন সবকিছুর মূল্য ৫ এবং ১০ টাকায় চলে আসবে তখন এক ও দুই টাকার নোট তুলে নেয়া হবে। এরপর ১৫ নভেম্বর ২০১৫ তে তিনি সংসদে আরো একটি বক্তব্য দেন। সেদিন তার বক্তব্যে ৫ টাকার কয়েনকে অবৈধ বলে দাবি করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ধাতব মুদ্রা কাগজের নোটের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী। একটি কাগজে নোট সাধারণত ৯ মাস, ক্ষেত্র বিশেষে সর্বোচ্চ দেড় বছর পর্যন্ত ব্যবহার কার যায়। অন্যদিকে ধাতব মুদ্রার সাধারণ আয়ুষ্কাল কমপক্ষে ৮ বছর, ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এ কারণে ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করলে টাকা ছাপানো বাবদ কাগজের নোটের প্রতিটির তুলনায় সরকারের ১০০ গুণ কম অর্থ খরচ হয়। এতে মুদ্রা প্রচলনের ব্যয় কমে আসে। তবে কাগজে মুদ্রা বহন করা সহজ হওয়ায় এর ব্যবহার বেশি। এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব অর্থমানের ধাতব মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে সেসবের কাগজের নোট রাখা হয় না। তবে আমাদের দেশে দুই থেকে পাঁচ টাকার কাগজে নোট ও ধাতব মুদ্রা একসাথে প্রচলিত আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মুদ্রা বাজারে বর্তমানে এক, দুই ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকার সমমূল্যমানের এক ও দুই টাকা এবং ৪০০ কোটি টাকা সমমূল্যের পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা বাজারে রয়েছে। এছাড়া দুই ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের কাগজের নোটও বাজারে রয়েছে। এখন পাঁচ টাকার নোটগুলো সবই সরকারি মুদ্রা।

 

সোনালীনিউজ/এমএই্

Wordbridge School
Link copied!