• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে বিব্রত সরকার


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৭, ২০১৯, ০১:৫৩ পিএম
ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে বিব্রত সরকার

ফাইল ছবি

ঢাকা : প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিব্রত সরকার। গত ছয় বছরে সারা দেশে প্রায় ৮৮ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে মৃত্যুর শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে।

প্রশিক্ষিত জনবল ও দক্ষ জনশক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রাংশ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও সরকারের তরফ থেকে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের সময় উৎসুক জনতার মধ্য থেকে যারা লুটপাট ও সেলফি তুলবে তাদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪০৬টি। তবে নির্মাণাধীনসহ দেশে মোট ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৫৬৫টি এবং জনবল ১৫ হাজার। দক্ষ জনবল ও ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার চিত্র পরিবর্তন হচ্ছে, দুর্ঘটনাগুলো যেমন নতুন চরিত্রে আবির্ভূত হচ্ছে, তেমনি প্রশিক্ষণও আধুনিক করার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার পাশাপাশি শৃঙ্খলা ও আচরণ দিয়ে বাহিনীর সুমান বৃদ্ধি করা হবে।

যেভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয় : অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করা হয়। এসব কার্যক্রম যেকোনো প্রকার অগ্নিদুর্ঘটনার শুরুতেই অগ্নিনির্বাপণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ প্রশিক্ষণ ও মহড়া থেকে অর্জিত জ্ঞান পরে বিভিন্ন প্রকার অগ্নিদুর্ঘটনায় ফলপ্রসূভাবে প্রয়োগে সক্ষম হবে, ফলে আগুন ব্যাপক রূপ নিতে পারবে না এবং সহজেই নির্বাপিত হবে।

স্টেশনগুলো থেকে যেভাবে অপারেশন পরিচালনা করা হয় : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানায়, স্টেশনগুলোর প্রধানতম কাজ হচ্ছে একসেট লোকবল সদা প্রস্তুত ও গাড়ি রেডি রাখা। বেশিরভাগই অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও রোগী পরিবহন সম্পর্কিত। বাসাবাড়ি, ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানাসহ যেকোনো স্থানে সকল প্রকার অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়োজিত সদস্যরা সব সময় প্রস্তুত থাকে।

ফায়ার সার্ভিসের অন্যতম প্রধান পলিসি হচ্ছে- অগ্নিনির্বাপণের চেয়ে অগ্নিপ্রতিরোধ উত্তম সেহেতু অগ্নিপ্রতিরোধের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন শিল্পকারখানা, স্থাপনাগুলোয় ব্যবহূত দাহ্য পদার্থের মাত্রানুযায়ী সম্ভাব্য অগ্নিঝুঁকি বিবেচনা করে বিদ্যমান অগ্নিনির্বাপণী ব্যবস্থা পরিমাপ করে যথার্থতা সাপেক্ষে মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ও প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, জনসম্মুখে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করা।

এছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনাসহ যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনায় আটকেপড়া বিপন্ন মানুষদের আধুনিক যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে কার্যকরভাবে উদ্ধারে সদা তৎপর এবং উদ্ধারপরবর্তী আহতদের সেবা প্রদান ও দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ভূমিকা পালন করা। নৌ-দুর্ঘটনায় বা যেকোনো প্রকারে পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের রয়েছে প্রশিক্ষিত ডুবুরি বাহিনী।

বছরে দেড় লাখ মানুষকে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে : সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রতিবছর স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অন্তত দেড় লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া প্রত্যেকটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে। গতকাল মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যেও সরকার ব্যয়বহুল এসব প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, দেশ যেমন এগোচ্ছে, তেমনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সেবা-কর্মতৎপরতাও অনেকাংশে বেড়েছে। আগুন, ভূমিকম্প, বন্যা, লঞ্চডুবি থেকে শুরু করে প্রায় সব বিপর্যয়ে দমকলকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরাও হতাহতের শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ফায়ার সার্ভিসকে যুগোপযোগী করতে নানা ইনস্ট্রুমেন্ট ক্রয় করেছে। এখন নতুন করে উন্নত বিশ্বের আদলে ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীরা যাতে আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারে সেসব উদ্যোগ পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া যারা অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে তামাশা করবে, লুটতরাজ করবে, তাদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!