• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্বংসস্তূপে বডি স্প্রে আর প্লাস্টিকের দানা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯, ০৬:৩১ পিএম
ধ্বংসস্তূপে বডি স্প্রে আর প্লাস্টিকের দানা

ঢাকা: পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১৮ ঘণ্টা পরও ভবন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা থেকে ওয়াহেদ ম্যানশনের তৃতীয় তলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমদ খান বলেন, অভিযান সমাপ্ত হয়েছে, তবে নতুন করে যাতে এখানে আগুন না লাগতে পারে তাই ফায়ার সার্ভিসের ৩টি টিম ঘটনাস্থলে থাকবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুড়িহাট্টা মোড়ের চারদিকে কেবল পোড়া ধ্বংসস্তূপ। মাটিতে পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া ৫-৬টি রিকশা, দুটি মোটরসাইকেল, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, দুটি প্রাইভেটকার, একটি পিকআপ ভ্যান, হাজার হাজার বোতল বিস্ফোরিত বডি স্প্রে আর লোশনের বোতল। রয়েছে অসংখ্য প্লাস্টিকের দানা। এসবের কারণেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে আগুন।

রহিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা অগ্নিকাণ্ডের সময় উর্দু রোডের একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। বিকট শব্দ শুনে এসে দেখি এই দৃশ্য। আমার দেখা মতে নিহতদের অধিকাংশ রাস্তায় ছিল। কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল, কেউ রিকশায় চড়ে যাচ্ছিল। তারাই বেশি আক্রান্ত হয়েছে। বাড়ির লোকজন বের হওয়ার জন্য ২-১ মিনিট সময় পেয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের কারণে রাস্তার লোকজন সরে যাওয়ার সময় পায়নি।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের আশপাশের ভবনের লোকজন ইতোমধ্যে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়াগায় চলে গেছেন।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রাত ৩টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০০ কর্মী। তবে ছোট গলি ও পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭০টি লাশ উদ্ধার হয়। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ৪১ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

গোটা চুড়িহাট্টা মোড় এলাকার বাতাসে কেবল পোড়া গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। বিকেলেও অনেকে চকবাজার এসে তাদের স্বজনদের নিখোঁজ বলে দাবি করছেন। তাদের স্বার্থে নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা দুই টিমে বিভক্ত হয়ে চকবাজারে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাইকিং করে নিখোঁজদের নাম-পরিচয় ইত্যাদি সংগ্রহ করছে।

দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ হস্তান্তরের কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত ৩৪টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। পুড়ে অঙ্গার যাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না সেগুলোর ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের পর সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনও। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ খোকন বলেন, পুরান ঢাকায় কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালের গোডাউন থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না। গোডাউন উচ্ছেদের জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, গত সোমবার থেকেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু হয়েছে। আগুন লাগার ঘটনার সাত আট দিন আগে এফবিসিসিআই এর মাধ্যমে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করা হয়েছিল। তারপর থেকে আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করি। আমাদের আগে থেকেই উচ্ছেদ অভিযান চলছিল। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!