• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন কোনো বিদ্যুত কেন্দ্রেই আর গ্যাস দেয়া হবে না


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ১১, ২০১৬, ০২:১৩ পিএম
নতুন কোনো বিদ্যুত কেন্দ্রেই আর গ্যাস দেয়া হবে না

সঙ্কটের কারণে নতুন আর কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই গ্যাস দেবে না পেট্রোবাংলা। কারণ এখনো চাহিদার তুলনায় দৈনিক অন্তত ৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এই অবস্থায় নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হলে জ্বালানি খাত বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তাছাড়া সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তও ছিল নতুন করে আর কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হবে না। তবে অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বদলে কোনো কোম্পানি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে সেখানে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

সেজন্য ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন করে আর কোনো গ্যাস সংযোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েও সরকার তা রাখতে পারেনি। বরং বছরের শুরুর দিকে ব্যবসায়ীদের চাপে নতুন করে ২৭টি ক্যাপটিভে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। মূলত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশেই ওসব গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাভাবিক সময়ে গ্যাসচালিত অন্তত ৮শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাসের অভাবে বন্ধ রাখতে হয়। আর সার কারখানা বন্ধ রাখলে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ৩০০ মেগাওয়াটের মতো বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সার কারখানা সারাবছরই বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তারপরও গ্রীষ্ম এবং রমজানে সার কারখানা বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

চলতি বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা দিয়েছে পেট্রোবাংলা তা কোনো সময়ই পূরণ করতে পারেনি। ফলে পিডিবির চাহিদার অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস সরবরাহ নিয়েই বিদ্যুত সঙ্কট সামাল দিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে সুপারিশ করা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে সরকারকে জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, মেঘনাঘাটে সামিট পাওয়ার একটি দ্বৈত জ্বালানির কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলেও পেট্রোবাংলা সেখানে প্রতিশ্রুতি দিয়েও গ্যাস দিতে পারেনি। বাধ্য হয়ে ওই কেন্দ্রটি এখন ডিজেল দিয়ে বিদ্যৃৎ উৎপাদন করছে। দেশের মোট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাত্র ১৬ শতাংশ কম্বাইন্ড সাইকেলে উৎপাদন করে। বাকি সব গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রই অদক্ষ।

তার বাইরে আরো অন্তত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যার উৎপাদন দক্ষতা নেই। সাধারণত সিম্পল সাইকেলে যে পরিমাণ গ্যাসে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় কম্বাইন্ড সাইকেলে একই জ্বালানি খরচে তার দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সেজন্যই সরকার কোনো কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে রিপাওয়ারিং করে সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি ঘোড়াশালের একটি কেন্দ্রকে রিপাওয়ারিং করার জন্য চুক্তি সই হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, ইতিপূর্বে গ্যাস বিদ্যুৎ বিভাগের চাপে পেট্রোবাংলা চাহিদার স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির বাইরে অতিরিক্ত ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাতে আরো অন্তত ৮শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেয়া ওসব কেন্দ্রেই গ্যাস দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে এখন পেট্রোবাংলা শঙ্কিত। অতিসম্প্রতি ৫০ মেগাওয়াটের একটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে তারা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আর গ্যাস দিতে পারবে না।

এদিকে শিগগিরই আরো কয়েকটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। আগামী পাঁচ বছরে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় সবই কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফলে সীমিত গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতার মধ্যে অধিক জ্বালানি দক্ষতাসম্পন্ন বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে প্রাধান্য দেয়া উচিত। কিন্তু জ্বালানি দক্ষতা কম থাকার কারণে ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. ইসতিয়াক আহম্মদ মন্ত্রণালয়কে জানান, বর্তমানে দেশে গ্রাহকের সর্বাধিক গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। তার বিপরীতে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক গড়ে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারী হিসেবে এই সঙ্কট ৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। 

গ্যাসের সঙ্কটের কারণে দেশে বিদ্যমান গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সার কারখানাগুলো একই সাথে চালু রাখা যাচ্ছে না। তাছাড়া গ্যাসের চলমান চাহিদা বিবেচনা করে অনুমান করা যায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!