• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
ডিজিটাল অর্থনীতির সম্প্রসারণ

নতুন পথে বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২২, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম
নতুন পথে বাংলাদেশ

ঢাকা : ‘ডিজিটাল অর্থনীতি’র সুফল নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এমনই আভাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক খাতে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোও এখন বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধটি লিখেছেন বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।

নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো ডিজিটাল অর্থনীতির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে এসব দেশের বেকারত্বের হারও কমছে। এতে এগিয়ে রয়েছে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটির ২৪ শতাংশ গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সার ওয়ার্কার আছে। ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবদান ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ফিল্যান্সার হচ্ছে ১২ শতাংশ।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজার অনেক বড়। দেশে বসেই দেশের বাইরের কাজ করা সম্ভব। এ জন্য অফিস বা কোথায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ডিজিটাল এই প্ল্যাটফর্মের ফলে নতুন চাকরি বাজার তৈরি হয়েছে, তৈরি হয়েছে কাজের সুযোগ। খরচ ও ঝুঁকি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অনেক উন্নত দেশও এখন বাংলাদেশের মতো আইটি আউটসোর্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে।

এদিকে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং পেশার জনপ্রিয়তা দারুণভাবে বেড়ে চলেছে। ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় অনেক বেকাররা এদিকে ঝুঁকছেন এবং নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর ফ্রিল্যান্সররা ১০ কোটি ডলার আয় করে থাকেন। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মূলত, সেলস ও মার্কেটিং সেবায় পারদর্শী।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিয়মিত কাজ করছে ৫ লাখ মানুষ। এ ছাড়া এখান থেকে নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের মোট সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার। বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। এখানের ৪ কোটি ৪০ লাখ তরুণের প্রতি দশজনের একজন বেকার। আর এ বেকারত্বের সংখ্যা নিয়মিত হারেই বাড়ছে। তবে এসব তরুণদের সামনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে। এ জন্য এসব তরুণদের প্রয়োজন আইটিবিষয়ক প্রশিক্ষণ।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তরুণরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো কাজ করছে। তাই আশা করা যায়, এতে তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত করবে। এখানে কাজের মাধ্যমে তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে ‘নতুন বাংলাদেশে’র ডিজিটাল অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরো মজবুত করবে।

ফ্রিল্যান্সিং নারীদের জন্য দারুণ সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন ওই প্রবন্ধের লেখক। তিনি প্রবন্ধে লিখেছেন, বাংলাদেশের নারীরা প্রথাগত সাংসারিক দায়িত্ব পালন করে ঘরে বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করতে পারবেন। এর মধ্যেই বাংলাদেশের নারীরা এই মাধ্যমে কাজ শুরু করেছেন। তাদের অংশগ্রহণও দিন দিন বাড়ছে। গবেষণা বলছে, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পুরুষদের চেয়ে নির্ভরযোগ্য হলো নারীরা। তাদের অংশগ্রহণে এই সেক্টর বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

এদিকে সরকারও ফ্রিল্যান্সারদের গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন প্রতি জেলাতে আইসিটি পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে এই সেক্টরের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলোতে ভালো মনোযোগী হতে হয়। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজের ক্ষতি হয়। এমন হলে কিছু কিছু কাজ আর ফেরত পাওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানো গেলে এই সেক্টরে আরো অনেক মানুষ যুক্ত হতে পারবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে তরুণদের আইটি প্রশিক্ষণ বাড়িয়ে ডিজিটাল কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাহলে শিক্ষিত বেকার তরুণরা এই সেক্টরে যুক্ত হয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!