• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নবজাতক সন্তান কোলে নিয়ে নিজের ফাঁসির রায় শুনলেন মণি


ফেনী প্রতিনিধি অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৫:০৩ পিএম
নবজাতক সন্তান কোলে নিয়ে নিজের ফাঁসির রায় শুনলেন মণি

ফেনী : ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় অংশ নেওয়া কামরুন নাহার মণি নবজারতক কন্যাসন্তান নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দায়ের নিজের ফাঁসির রায় শুনেছেন।  মামলায় মণিসহ ১৬ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত।  এসময় কাঠগড়ায় ১৬ আসামির সবাই উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই রায় দেন।

এর আগে সোনাগাজী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামিকে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। সিরাজ-উদ-দৌলা সবাইকে সালাম দিয়ে কাঠগড়ায় ওঠেন। সে সময় সবাইকে দোয়া পড়তে দেখা যায়। আসামিদের উদ্বিগ্ন দেখা যায়।

তাঁদের ভেতরেই একজন কামরুন নাহার মণি। তিনি তঁর সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়ান। কাঠগড়ায় ওঠার আগে মণি তাঁর সন্তানকে কোলে করে নিয়ে যান আদালত প্রাঙ্গণে। সে সময় শিশুটির শরীরে একটি তোয়ালে পেঁচানো অবস্থায় দেখা যায়।

গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে কারাবন্দি কামরুন নাহার মণির প্রসব বেদনা শুরু হলে দ্রুত তাঁকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে রাত সাড়ে ১২টায়, অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর মণির কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। নুসরাত হত্যা মামলায় মণি যখন গ্রেপ্তার হন, তখন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

মামলার বিচারকাজ শুরু হলে মণিকে প্রতি কার্যদিবসে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁর আইনজীবী কয়েকবার জামিন চাইলেও আদালত নামঞ্জুর করেন। অন্তঃসত্ত্বা থাকার কারণে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে বিচারকাজে অংশ নেওয়ার আবেদন জানালে আদালত সেটাও নামঞ্জুর করেন।

আদালতে মণির আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আবু তাহেরের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ২৪ সেপ্টেম্বর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দিয়ে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন।

গর্ভে সন্তান রেখেই নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় অংশ নেন কামরুন নাহার মণি। তিনিই প্রথম নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, হত্যায় অংশ নেওয়া তাঁর তিন সহযোগী পুরুষের জন্য তিনটি বোরকা ও হাতমোজা সংগ্রহ করেছিলেন ঘটনার আগে।

নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দায় স্বীকার করে মামলার প্রধান আসামি শামীমের জবানবন্দিতে মণির কথা উঠে আসে। পরে কামরুন নাহার মণি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি তাঁর দোষ স্বীকার করে নিয়ে এসব কথা বলেছিলেন।

নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম গণমাধ্যমে এসব কথা বলেছিলেন।  তিনি বলেছিলেন, ‘কামরুন নাহার মণি গর্ভে সন্তান নিয়ে অপর তিন পুরুষ সহযোগীর সঙ্গে সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেন।  সহযোগীদের জন্য বোরকা ও হাতমোজা কেনেন তিনি।’

শাহ আলম বলেছিলেন, ‘নুসরাতের ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ছিলেন মণি।  অথচ হত্যার সময় নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরেন তিনি।  মামলার আরেক আসামি উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতের পা বেঁধে চলে যাওয়ার সময় মণি তাকে শম্পা বলে ডাকেন। এই শম্পা নামটি মনির দেওয়া।’

কামরুন নাহার মণি সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঈমান আলী হাজি বাড়ির প্রয়াত বিজিবি সদস্য আজিজুল হকের পালিত মেয়ে।  নুসরাতের সঙ্গে তিনিও আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। গত ৯ এপ্রিল তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মামলার ১৬ নম্বর আসামি।

ফাঁসির আদেশ পাওয়া মামলার ১৬ জন হলেন—প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলা, দুই নম্বর আসামি ফেনী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. নূর উদ্দিন, তিন নম্বর আসামি মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, চার নম্বর আসামি সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, পাঁচ নম্বর আসামি ছাত্রলীগকর্মী ও মাদ্রাসার ফাজিল বিভাগের ছাত্র মো. জোবায়ের, ছয় নম্বর আসামি চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী জাবেদ হোসেন, সাত নম্বর আসামি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাফেজ আবদুল কাদের এবং আট নম্বর আসামি মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আফছার উদ্দিন।

ক্রমানুসারে অন্য আসামিরা হলেন মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষ ও ফেনী পলিটেকনিক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রলীগকর্মী মো. শামীম, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ফেনী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এমরান হোসেন মামুন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ইফতেখার উদ্দিন রানা, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রদলকর্মী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন শাকিল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন, মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী উম্মে সুলতানা পপি ও মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী কামরুন নাহার মণি।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!