• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
নাঈম রাজনীতির শিকার

নাঈমকে দেয়া পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নিচ্ছেন সামি!


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ৪, ২০১৯, ১২:১৬ পিএম
নাঈমকে দেয়া পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নিচ্ছেন সামি!

ঢাকা : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে রাজধানীর করাইল বস্তির শিশু নাঈম ইসলাম বেশ আলোচিত। গত ২৮ মার্চ বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের দিনে লাখ জনতা যখন দর্শনার্থী হয়ে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত ছিল শিশু নাঈম ইসলাম তখন আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত ফায়ার সার্ভিসের একটি পাইপের ছিদ্র অংশ দুই হাতে চেপে ধরে নিরন্তন চেষ্টা করে যাচ্ছিল যেন সবটুকু পানি আগুনের স্থলে গিয়ে পড়ে।

নাঈমের এই ছবিটি মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নাঈম পরিণত হয় সুপারহিরো আর পাইপ বালকে। ছবি দেখার পর নাঈমের মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে নাঈমের জন্য পাঁচ হাজার ডলার ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামি। পাশাপাশি তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়ার কথাও জানান।

এ ঘটনায় আলোচনায় আসার পর টিভি উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় একান্ত সাক্ষাৎকার নেন। বনানী ট্র্যাজেডির বীর নাঈমের সঙ্গে তখন তার বাবা-মাও ছিলেন। নাঈম পুরস্কারের সেই টাকাগুলো নেবে কিনা? আর নিলেও সেই টাকা কিসে খরচ করবে? এমন প্রশ্ন করেন উপস্থাপক জয়।

জবাবে নাঈম জানায়, সেই টাকাগুলো সে এতিমখানার অনাথ শিশুদের জন্য দান করে দিতে চায়। ছেলের এ জবাবে সায় দেন তার মা-বাবাও। এতিমখানায় কেন টাকা দিতে চায় এমন প্রশ্নের উত্তরে নাইম বলন, কিছু বছর আগে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা লুট করে খেয়েছে তাই এই টাকা তিনি এতিমদের দিতে চান।

তবে শিশু নাঈমকে জয়ের এ ধরনের প্রশ্ন করাটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেছেন ফেসবুক ব্যবহাকারীরা। তারা বলছেন, ওই শিশুটি নিজ থেকে এসব কথা বলেনি। উপস্থাপক জয় শিশু নাঈমকে কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে শিশুটির কথা বলার ধরনেই তা স্পষ্ট।

এতোটুকুন শিশু রাজনীতির কি বুঝে যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই প্রশ্নও ছোঁড়া হয় নেট জগতে। এরই মধ্যে গুঞ্জন শোনা যায় নাঈমকে সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেয়া সেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তার কথা ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি ৫ হাজার ডলার নাঈমকে দেবেন না।

নাঈম রাজনীতির শিকার জানিয়ে ওমর ফারুক সামি ৫ হাজার ডলার দেবেন না এমন কথা সোমবার (১ এপ্রিল) ফেসবুকে ভাসতে থাকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গণমাধ্যমকর্মী ও কণ্ঠশিল্পী আমিরুল মোমিনিন মানিক। আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

সেই ভিডিওতে আমিরুল মোমিনিন মানিক শিশু নাঈমকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মা কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন, তোমার পড়াশোনার খরচ বহন করছেন, তোমার নিজেরই টাকা দরকার, তাহলে তুমি কেন সে টাকা নিজে না রেখে এতিমদের দিয়ে দিতে চাও? এটা কী তোমার মনের কথা?’ নাঈমের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘না, এটা বলতে তারা শিখিয়ে দিয়েছিল।’

এরপর প্রশ্নকর্তা বলেন, ‘যিনি তোমাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন তিনি এখন বলেছেন আর টাকা দেবেন না। তুমি কী টাকাটা চাও?’ নাঈমের জবাব, ‘আমি ওই কথা না বুঝে বলেছি, আমি টাকা চাই, আমার পড়াশোনার জন্য টাকা চাই।’

একই প্রশ্ন করা হয় নাঈমের মাকে। তিনি বলেন, ‘নাঈম ছোট মানুষ, তাই না বুঝে এসব বলেছে। আমি গরীব মানুষ, টাকাটা আমারই দরকার। সে টাকা অন্যদের দিয়ে দিলে আমার নাঈমকে আমি কীভাবে মানুষ করব!’

এদিকে ওমর ফারুক সামি নামের সেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাঈমকে টাকা দেবেন না এমন গুঞ্জন সঠিক কি-না সেটা জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে এমন কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি। সেখানে ১৮ ঘণ্টা আগে নাঈমকে নিয়ে লেখা তার সর্বশেষ একটি পোস্ট পাওয়া গেছে। যেখানে কেন নাঈমের জন্য তিনি ভালোবাসা দেখালেন সে বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।

তার সেই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো -

‘আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত বন্ধুরা আপনারা জানেন

দুদিন পূর্বে রাজধানী বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর হাজার হাজার জনতা যখন সেলফি-ভিডিওতে অস্থির ছিলো, ঠিক সেই মূহুর্তে ফায়ার সার্ভিসের একটি ছিদ্র পাইপ শক্ত করে ধরে ছিলো নাঈম নামে এক ছোট্ট শিশু। সেই নাঈমের পাইপ ধরার একটি স্থির চিত্র সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

স্বাভাবিক নিয়মে ছবিটি আমার টাইমলাইনে আসে এবং আমার হৃদয়ে নাড়া দেয়। আমি ছোট নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছি। তার জন্য তখনই মন থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম নেয়। সাথেসাথে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আমার বন্ধুবর সাংবাদিক আওয়াজবিডির সম্পাদক শাহ আহমদকে কল দিয়ে ছেলেটির সন্ধান করার অনুরোধ জানাই। সাংবাদিক শাহ আহমদ Shah Ahmed আমার কথায় দেশের সাংবাদিকদের মাধ্যমে নাঈম ও তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

নাঈমের মায়ের কাছ থেকে জানতে পারি সে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। তাৎক্ষণিক আমার মাথায় আসলো ছেলেটের পাশে দাঁড়ানো উচিত। দয়া কিংবা নামের জন্য নয় বরং একজন মানবতাবাদীর পাঁশে দাঁড়ানোকে দায়িত্ব মনে করে বড় ভাই হিসেবে পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। খুব শীঘ্রই আমার আব্বা নাঈমের বাসায় যাবেন এবং বিস্তারিত আলাপ করে টাকা দেওয়ার মাধ্যম জানাবেন। নাঈমের সাথে আমি দুবার কথা বলেছি সে আমার জন্য দোয়া করেছে এবং বলেছে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেখা করবে।

আমার এই ঘোষণার পর আওয়াজবিডির মাধ্যমে সারাদেশে প্রচার হয়ে যায়। দেশের প্রায় সব প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হতে থাকে যদিও এই প্রচারণায় আমার কোন ইচ্ছে বা জরুরতই ছিল না। এদিকে সংবাদটি শুনে আমার ফেসবুকে অগণিত বার্তা আসতে থাকে। বার্তাতে সবাই মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোয় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সকল বার্তার জবাবে একটা কথাই বলব বিষয়টা ছিল কেবল মানবতা ও ভালোবাসা।

প্রিয় জন্মভূমিতে নাঈমদের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাক এই দোয়া করি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের কাছে একটাই চাওয়া নাঈমদের সুযোগ করে দিন নাঈমরা আপনাকে একটি মানবতাবাদী পরিবেশ উপহার দেবে।’

অবশেষে নাঈমকে ৫ হাজার ডলার দেয়ার ব্যাপারে যা বললেন সেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী : সম্প্রতি রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের ছিদ্র অংশ পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে দুই হাতে চেপে ধরে আলোচনায় এসেছে ছোট্ট শিশু নাঈম। মুহূর্তের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।

এদিকে শিশুটির এমন কাজে মুগ্ধ হয়ে ও তার পরিবারে আর্থিক অসঙ্গতির কথা জেনে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে অনেকই। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি ওমর ফারুক সামি, যিনি নাঈমকে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তার পড়াশোনার দায়িত্বও নিতে চান।

বিষয়টি আলোচনায় আসার পর টিভি উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় নাঈমের একান্ত সাক্ষাৎকার নেন। নাঈম সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তার বাবা-মা সঙ্গে ছিলেন। প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে উপস্থাপক জয় নাঈমের কাছে জানতে চান পুরস্কারের সেই টাকাগুলো নাঈম নেবে কি-না? আর নিলেও সেই টাকা কিভাবে খরচ করবে?

এ সময় জবাবে নাঈম জানায়, সেই টাকাগুলো সে এতিমখানার অনাথ শিশুদের জন্য দান করে দিতে চায়। ছেলের এ জবাবে সায় দেন তার মা-বাবাও।

এরপর উপস্থাপক জয় পাল্টা প্রশ্ন করেন, এতিমখানায় কেন টাকা দিতে চায় নাঈম। জবাবে নাঈম জানায়, কয়েক বছর আগে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা লুট করে খেয়েছে। তাই এই টাকা সে এতিমদের দিতে চায়।

এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাক্ষাৎকারটি ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। শিশু নাঈমকে জয়ের এ ধরনের প্রশ্ন করাটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করতে থাকে নেটিজেনরা। এ বিষয়ে নেটিজেনদের ভাষ্য, ‘শিশু নাঈম নিজ থেকে এসব কথা বলেনি। উপস্থাপক জয় তাকে কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে শিশুটির কথা বলার ধরনেই তা প্রকাশ পেয়েছে।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাঈমকে সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেয়া সেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীও তার কথা ফিরিয়ে নেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ হাজার ডলার নাঈমকে দেবেন না। নাঈম রাজনীতির শিকার জানিয়ে ওমর ফারুক সামি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।’

কিন্তু সর্বশেষ শিশু নাঈমের আরেকটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিক ও উপস্থাপক আমিরুল মোমেনিন মানিক তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, উপস্থাপক মানিক বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায়ে নাঈমের কাছে জানতে চান, ‘তোমার মা কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন, তোমার পড়াশোনার খরচ বহন করছেন, তোমার নিজেরই টাকা দরকার, তাহলে তুমি কেন সে টাকা নিজে না রেখে এতিমদের দিয়ে দিতে চাও? এটা কী তোমার মনের কথা?’

এ সময় জবাবে নাঈম অকপটে বলছে, ‘না, এটা বলতে তারা শিখিয়ে দিয়েছিল।’

এরপর উপস্থাপক মানিক বলেন, ‘যিনি তোমাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন তিনি এখন বলেছেন আর টাকা দেবেন না। তুমি কী টাকাটা চাও?’

এ সময় নাঈমের জবাব, ‘আমি ওই কথা না বুঝে বলেছি, আমি টাকা চাই, আমার পড়াশোনার জন্য টাকা চাই।’

একই প্রশ্ন করা হয় নাঈমের মাকে। তিনি বলেন, ‘নাঈম ছোট মানুষ, তাই না বুঝে এসব বলেছে। আমি গরিব মানুষ, টাকাটা আমারই দরকার। সে টাকা অন্যদের দিয়ে দিলে আমার নাঈমকে আমি কীভাবে মানুষ করব!’

এদিকে নাঈমকে পাঁচ হাজার ডলার দেয়ার ঘোষণাকারী সেই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তার আগের বক্তব্যে অটল রয়েছেন, এমন একটি সাক্ষাৎকার ইউটিউবে প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় সাংবাদিক, অনুসন্ধানধর্মী অনুষ্ঠান একুশের চোখের সাবেক উপস্থাপক ইলিয়াস হোসাইন। বর্তমানে ইলিয়াসও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

এদিকে তার চ্যানেলে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়- ওমর ফারুক সামি বলছেন, ‘তিনি জানতে পেরেছেন শিশু নাঈমকে শিখিয়ে দেয়ার কারণে সে খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেছিল, যা পরে তারা ভুল বুঝতে পেরেছে। শিশু নাঈমকে পর্যায়ক্রমে ঘোষণাকৃত টাকাটা দেবেন তিনি।’

খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চাইলেন শিশু নাঈমের মা : রাজধানীর বনানী অগ্নিকাণ্ডে পানির পাইপ ধরে আলোচনায় আসা শিশু নাঈম ইসলাম অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে কথা বলেছিল, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন তার মা নাজমা বেগম।

তিনি বলেন, তিনি তার ছেলের (নাঈম) দেয়া বক্তব্যকে ভুল হয়েছে বলে মনে করছেন। তবে এই কথাটি শিশু নাঈমকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই বলছেন না নাজমা বেগম।

মঙ্গলবার বিকালে নাঈমের মা নাজমা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, দয়া করে খালেদা জিয়ার ব্যাপারটার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি, সেটি একটু প্রচার করেন আপনারা। ওই নেত্রীর (খালেদা জিয়া) কাছে আমি আমার ছেলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমার স্বামী আমাদের সঙ্গে থাকেন না। আমি আমার ছেলে ও ছোট একটা মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন চালাই। আমি বাসাবাড়িতে কাজ করে খাই। আমি চাই না, আমার ছেলে কোন বিপদে পড়ুক।

তিনি বলেন, আমি প্রথমের দিক ছিলাম না। যখন শাহরিয়ার নাজিম জয় নাঈমকে বাসা থেকে তার স্টুডিওতে নিয়ে যায়, তখন আমি ছিলাম না। নাঈমকে একাই নিয়ে গিয়েছিল। আমি এর দেড় ঘণ্টা পর সেখানে গেছি। তাই নিয়ে যাইয়া যে নাঈমকে কিছু শিখাইছে কি শিখায় নাই, সেটা আমি জানি না।

ছেলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি বলেন, আমি বলি- ও (নাঈম) একটা ছোট মানুষ। আমি কারও দোষ দিব না। আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি, এই কথাটার (খালেদা জিয়ার এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গ) কারণে। আমি তো আর বলতে বলি নাই। আমার ছেলে বুঝেও বলে নাই।

নাজমা বেগম আরও বলেন, এ ঘটনার পর শাহরিয়ার নাজিম জয় আমাদের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করে নাই। ওই দিন ইন্টারভিউয়ের সময় শাহরিয়ার নাজিম জয় আমার ছেলের হাতে একটা খাম দিয়েছিল। আমি পরে বাসায় এসে খুলে দেখি দুই হাজার টাকা।

প্রসঙ্গত সম্প্রতি বনানী অগ্নিকাণ্ডে পানির পাইপ চেপে আলোচনায় আসে শিশু নাঈম ইসলাম। তার এমন কাজে খুশি হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি তাকে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় আলোচনায় আসার পর টিভি উপস্থাপক ও অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় শিশু নাঈমের সাক্ষাৎকার নেন। নাঈম পুরস্কারের সেই টাকাগুলো নেবে কিনা? আর নিলেও সেই টাকা কিসে খরচ করবে? এমন প্রশ্ন করেন উপস্থাপক জয়। জবাবে নাঈম জানায়, সেই টাকাগুলো সে এতিমখানার অনাথ শিশুদের জন্য দান করে দিতে চায়।

একপর্যায়ে এতিমখানায় কেন টাকা দিতে চায় জয়ের এমন প্রশ্নের উত্তরে নাঈম বলে, কিছু বছর আগে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা লুট করে খেয়েছে, তাই এ টাকা তিনি এতিমদের দিতে চান।

এ ঘটনার পর তীব্র সমালোনার মুখে পড়েন শাহরিয়ার নাজিম জয়। নাঈমকে জয়ের এ ধরনের প্রশ্ন করাটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করেন ফেসবুক ব্যবহাকারীরা।

তারা বলেন, ওই শিশুটি নিজ থেকে এসব কথা বলেনি। উপস্থাপক জয় শিশু নাঈমকে কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে শিশুটির কথা বলার ধরনেই তা স্পষ্ট।

এরপর শিশু নাঈমের কথার সত্যতা যাচাইয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গণমাধ্যমকর্মী ও কণ্ঠশিল্পী আমিরুল মোমিনিন মানিক। তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সেই ভিডিওতে আমিরুল মোমিনিন মানিক শিশু নাঈমকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মা কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন, তোমার পড়াশোনার খরচ বহন করছেন, তোমার নিজেরই টাকা দরকার, তা হলে তুমি কেন সে টাকা নিজে না রেখে এতিমদের দিয়ে দিতে চাও? এটা কী তোমার মনের কথা?’

নাঈমের সোজাসাপ্টা জবাব- ‘না, এটা বলতে তারা শিখিয়ে দিয়েছিল।’ এর পর প্রশ্নকর্তা বলেন, ‘যিনি তোমাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন তিনি এখন বলেছেন আর টাকা দেবেন না। তুমি কী টাকাটা চাও?’ নাঈমের জবাব, ‘আমি ওই কথা না বুঝে বলেছি, আমি টাকা চাই, আমার পড়াশোনার জন্য টাকা চাই।’

একই প্রশ্ন করা হয় নাঈমের মাকে। তিনি বলেন, ‘নাঈম ছোট মানুষ, তাই না বুঝে এসব বলেছে। আমি গরিব মানুষ, টাকাটা আমারই দরকার। সে টাকা অন্যদের দিয়ে দিলে আমার নাঈমকে আমি কীভাবে মানুষ করব!’

তবে ওই সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে শিশু নাঈমকে কোনো কথা শিখিয়ে দেননি বলে দাবি করেছেন অভিনেতা জয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!