• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে তিন বছরে ১১২ খুন!


মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, নাটোর জানুয়ারি ২৩, ২০১৯, ০৭:০৮ পিএম
নাটোরে তিন বছরে ১১২ খুন!

ছবি : সোনালীনিউজ

নাটোর : আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসন, ছিনতাই, পারিবারিক বিরোধসহ নানা কারণে নাটোরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। পুলিশের তথ্যমতে, গত তিন বছরে এই জেলায় ১১২টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এতে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসী। তবে পুলিশের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। হত্যা মামলার তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতির কথাও জানান তারা।

জানা যায়, নাটোরের সাত উপজেলায় প্রায় প্রতি মাসেই নানা কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডগুলো সংগঠিত হয় প্রকাশ্যেই। ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসনসহ পারিবারিক বিরোধে প্রাণ হারাচ্ছে নারী, শিশুসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তবে সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনতাই ও চালক খুনের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়রা মনে করছেন একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র এর সঙ্গে জড়িত।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১৮টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় এই জেলায়। আর ২০১৭ সালে এই জেলায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪২টি। ২০১৮ সালে সে সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২তে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হিসাবের বাইরে এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

কবি সালেহীন বিপ্লব বলেন, হত্যার শিকার হচ্ছে অটোরিকশা চালক, ভ্যানচালক বা দিনমজুরিতে কাজ করে এমন সাধারণ মানুষও। সারা দিনের পরিশ্রমের রোজগার নিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বা রাতের শেষ ভাড়া খাটতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে হারাতে হচ্ছে উপার্জিত অর্থ, তাদের বাহন এমনকি জীবন পর্যন্ত।

এছাড়া পারিবারিক ও জমিজমা সংক্রান্ত ছোট খাটো বিরোধ নিয়েই ঘটছে হত্যার মতো বড় ঘটনা। নাটোরে মাদকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে। এ ছাড়াও হত্যা মামলা দায়ের বা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসছে। হত্যাকাণ্ডগুলোর সঠিকভাবে তদন্ত করে বিচারের দাবি করেন তিনি।

নাটোর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রনেন রায় বলেন, যুব সমাজের অবক্ষর, সামাজিক সম্প্রীতির অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে। প্রশাসনের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক জানান, পর্যায়ক্রমে নাটোর জেলায় হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে তৎপরতা দেখাচ্ছে তা আরও জোরদার করা উচিত। যাতে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। একই সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে আসবে।

নাটোর সিটি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনায় বেশি হত্যার ঘটনা ঘটে। বিচার বিভাগ বড় একটা বিষয়। যে কোনো ঘটনা ঘটলেই সেখানে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে। এজন্য রাজনীতির ক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হলে সমাজেও এর প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করাও সম্ভব হবে। হয়তো এর ফলে হত্যাকাণ্ড অনেকটা হ্রাস পাবে।

নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ভাস্কর বাগচী জানান, হত্যা মামলায় শুধুমাত্র সাক্ষীর অভাবে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যায়। এ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদী আদালতে হাজির না হওয়াটাও বড় একটা কারণ। এসব কারণে মামলাগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকে এবং অভিযুক্তরা জামিনে মুক্তি পায়। এজন্য পরে তারা পুনরায় এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পায়। তিনি মনে করেন, সাক্ষী সুরক্ষা আইনসহ অভিজ্ঞ তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজন। তবেই মামলাগুলোর সঠিক বিচার হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন জানান, বিভিন্ন কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। সকল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে নাটোর জেলার পুলিশের সক্ষমতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ পর্যন্ত যতগুলো চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোয় আমরা অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হয়েছি।

হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অধিকাংশ মামলার চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও শেষের দিকে। মামলার অগ্রগতি ভালো। সবকিছু মিলে নাটোরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!