• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নামাজের সময় বাঘের ছবি ঢেকে বিতর্কে মুশফিক


ক্রীড়া প্রতিবেদক মার্চ ১৮, ২০১৯, ০৫:২০ পিএম
নামাজের সময় বাঘের ছবি ঢেকে বিতর্কে মুশফিক

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জামা কাপড়ে প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান থাকলে তা পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। ছবিযুক্ত জামা-গেঞ্জি পরে মসজিদে আসা মোটেও ঠিক না। এতে মসজিদের পবিত্রতা ও আদব নষ্ট হয়। এ ছাড়া অন্য মুসল্লিদের নামাযও মাকরূহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রেখেই জার্সির লোগোতে থাকা বাঘের ছবিতে টেপ জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে মসজিদে নামাজ আদায় করেন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করছেন কিছু মানুষ।  

এমনিতেই মন ভাল নেই মুশফিকের। গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। বর্বোরোচিত ঐ হামলার ট্রমা থেকে এখনো বেরুতে পারেনি তারা। এরইমধ্যেই জার্সির লোগোতে থাকা বাঘের ছবি ঢেকে নামাজ পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুশফিকুর রহীম।

অনেকেই এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও কেউ কেউ করেছেন বিরুপ মন্তব্য। তারা বলছেন লোগোতে বাঘের ছবি ঢেকে দেশকে অসম্মান করছেন মুশফিক। জিয়া আরফিন আজাদ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘খেলার বাইরে বা নামাজের সময়টা একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত। সেখানে সে আইনের মধ্যে থেকে যা খুশি করতে পারেন। তবে ইউনিফর্ম বা লোগোর গুরুত্ব আমরা সবাই জানি। একটা টি-শার্টে টেপ লাগাতে যেসময় লাগবে তার চেয়ে অনেক কম সময়ে নতুন আরেকটা পড়া যায় কিংবা টি-শার্টের ওপরে জ্যাকেট গায়ে দেওয়া যায়। পুরো প্রক্রিয়ায় পাঁচ সেকেন্ডের বেশি লাগার কথা নয়। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক, ন্যাশনাল লোগো বিকৃতি জাতীয় চেতনার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করে।'

আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘একটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে কথা বলাও অন্যায়! আপনি ইনিয়ে বিনিয়ে এটাকে, এর প্র‌তি সাফাই গাইতে পারেন না! খেলাধুলাও ইসলামে হারাম। তাহলে খেলাধুলা বাদ দিয়ে দিক! যে লোগো তার পেট চালায়, যে লোগো বুকে লাগিয়ে হাজার হাজার কো‌টি টাকা কামায়, তা ঢেকে রাখতে হবে কেন?? যে লোগো সারা পৃথিবীতে আমাদের প‌রিচয় বহন করে করে, আমরা টাইগার নামে প‌রি‌চিত। সেটা ঢাকবে কেন??’

শরীফ নামে একজন লিখেছেন, ‘এতই যদি মুমিন হন তাহলে খেলাধুলা বাদ দিলেই পারে, কারণ ইসলামে খেলা হারাম।’ পিয়াল নামে একজন লিখেন, ‘এইটা অবশ্যই একটা অন্যায়, যেটারে ডিফেন্ড করা উচিত না। তুমি টিম লোগো ঢাকতে পারো না, এটা ইনসাল্ট। তুমি ধার্মিক ওকে, নামাজ পড়বা সমস্যা নাই, জাতীয় দলের পোশাকে কেন? একটা সাদা টি শার্ট পরো, ১৫ সেকন্ড লাগবে বড়জোর গায়ে চাপাইতে। তোমার লেখা খুব পছন্দ করি এবং এটাও সত্য মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ দলের জন্য অনেক করছে। কিন্তু টাইগার ঢাইকা টাইগার সাজা ভণ্ডামি।’

তবে মুশফিকের লোগো ঢেকে নামাজ পড়ার কারণ ব্যখ্যা দিয়েছেন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি। ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো। তিনি লেখেন, ‘মুশফিক কেন তার জ্যাকেটে বিসিবির লোগোতে বাঘের ছবি ঢেকে রেখেছেন, এই নিয়ে তোলপাড় তুলে দেশপ্রেমের বিরাট প্রমাণ দিচ্ছে একেকজন। ওহে বিপ্লবী দেশপ্রেমী জনতা, শুধু মুশফিক না, দলের যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন, তারা সবাই নামাজের জন্য বাঘের ছবি ঢেকে রাখেন... প্রাণির ছবি দেখিয়ে নামাজ হয় না। ওরা যদি জার্সি গায়ে নামাজ পড়তে যায়, বেশিরভাগ সময় জার্সিটা উল্টো করে পরে। তাতে কি দেশের জার্সিকে অপমান করা হলো?’

আরিফুল ইসলাম রনি আরও লেখেন, ‘নিউজিল্যান্ডে ঠাণ্ডা, তাই জ্যাকেট পরে নামাজ পড়ছেন। জ্যাকেট তো উল্টো করে পরার উপায় নেই। তাই লোগোতে বাঘের ছবিতে টেপ দিয়ে রেখেছেন। অনেক সময় নামাজ শেষে টেপ খুলে ফেলেন, অনেক সময় খোলা হয় না। এই তো। এটায় ছবি বা প্রাণীর প্রতি বিদ্বেষ নেই, ক্রিকেট বোর্ডের প্রতীক বা দেশের প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। আর এই সবই প্র্যাকটিস জার্সি বা জ্যাকেটে। ম্যাচের সময় তো ঢেকে রাখেন না! পাঁজরে ব্যথা নিয়ে যে ছেলেটি দিনের পর দিন খেলছে, এশিয়া কাপে বুকে টেপ পেঁচিয়ে অসহ্য ব্যথা সহ্য করে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলেছে এবং অসাধারণ খেলেছে, যার পরিশ্রম দেখতে দেখতেই আমাদের প্রায়ই অস্থির লাগে যে এত কষ্ট কীভাবে করতে পারেন। সেই মুশফিক নাকি দেশের ক্রিকেটকে অপমান করেছেন লোগো ঢেকে রেখে!’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!