• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নায়ক থেকে খলনায়ক ইনজামাম


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ মে ২৫, ২০১৯, ০৮:৪৩ পিএম
নায়ক থেকে খলনায়ক ইনজামাম

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: রুপালি পর্দার নায়কদের মতোই ইনজামাম-উল-হকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ক্যারিয়ার। অভিষেক বিশ্বকাপে মাত্র ২২ বছর বয়সেই নায়ক বনে যান। ১৯৯২ বিশ্বকাপে যে ইমরান খান পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন সেখানে তরুণ ইনজামামের অবদানও কম নয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তার ৪৮ বলে ৬৮ রানের ইনিংসই পাকিস্তানকে ফাইনালের টিকিট পাইয়ে দিয়েছিল। ফাইনালেও ৪২ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস খেলেছিলেন ইনজামাম। গোটা ক্রিকেট দুনিয়া তখন বুঝে গিয়েছিল এই ছেলেটি ক্রিকেটে থাকতেই এসেছে। হ্যাঁ, মুলতানের সুলতান দীর্ঘদিনই পাকিস্তানের ঝান্ডা বয়ে বেড়িয়েছেন। খেলেছেন আরও চার চারটি বিশ্বকাপ। কিন্তু ৯২ এর ইনজামামকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এরমাঝে পাকিস্তান ১৯৯৯ সালে একবারই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু কী এক কারণে ফাইনালে ওয়াসিম আকরামের দল ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায়! এটা সেই সময় পাকিস্তান সমর্থকদের মাঝে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছিল! এক সাক্ষাৎকারে ইনজামামও স্বীকার করে নিয়েছেন সেবারই তাদের দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ের সুযোগ ছিল,‘ আমরা সেদিন লর্ডসকে বুঝতে পারিনি। ১৯৯৯-এর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমরা মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই হেরে গিয়েছিলাম। এখনও বিশ্বাস করি আমি যে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছি এরমধ্যে পাকিস্তানের এই দলটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। ইমরান খান অনভিজ্ঞ একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ১৯৯২ সালে। কিন্তু ১৯৯৯-এর পাকিস্তান দল ছিল অনেক অভিজ্ঞ। দুর্দান্ত ফর্মে ছিল আমাদের বোলার ও ব্যাটসম্যানরা।’

এরপর ২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ইনজামামের কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। সেটা এতটাই যে, মনে হয়েছিল ব্যাটই ধরতে জানেন না তিনি! ২০০৭ ক্যারিবীয় বিশ্বকাপে ইনজামাম নিজেই পাকিস্তানের অধিনায়ক। জীবনের শেষ বিশ্বকাপটা স্মরণীয় করতে চেয়েছিলেন ল্যাপটপ কোচ বব উলমারকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু উল্টো আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল পাকিস্তান। সেই ম্যাচের পর রহস্যজনকভাবে জ্যামাইকার একটি হোটেলে মারা যান উলমার। 

গোটা পাকিস্তান দলের জন্য তখনকার পরিস্থিতি ছিল বিভীষিকাময়। সেই স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়  ইনজামামকে,‘ ক্রিকেটে যে কারোরই একটা বাজে দিন আসতেই পারে। কিন্তু ফরম্যাটের কারণে কোনও একটি দলের চার বছরের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে এটা সত্যিই বেদনাদায়ক। ২০০৭ সালে আমরা যখন আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছিলাম আমাদের তখন ওই দূর্ভাগ্য পোহাতে হয়েছিল। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমার নেতৃত্বে দল আর এগোতে পারেনি।’

ইনজামামের মনে ধরেছে ইংল্যান্ডে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ। তার মতে, বিশ্বকাপে সুযোগ-সুবিধার জন্য ইংল্যান্ডই বিশ্বকাপের উপযুক্ত মঞ্চ। সেবার গ্রুপ পর্বে পর পর দুই ম্যাচ জয়ের পর পাকিস্তান হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকেও। সেই প্রসঙ্গ টেনে ইনজামাম বলেন,‘ পরপর দুই ম্যাচ জয়ের পর আমরা অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছিলাম। আর এটাই আমাদের মনে আতœবিশ্বাস জুগিয়েছিল যে, আমরা আবার বিশ্বকাপ জিততে পারি। আমি বিশ্বকাপ সেরা ৮১ রান করলাম। সঙ্গে আব্দুল রাজ্জাকের সঙ্গে ১০০ রানের জুটি। তাতেই আমাদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ২৭৫। পরে ওয়াসিম রিভার্স সুইং করে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে আমাদের ১০ রানে জিতিয়েছিলেন।’ 

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে পরাজয়টাকে ইনজামাম আখ্যা দিয়েছেন কালো দিন হিসেবে। তার মতে,‘ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আমরা সুপার সিক্স নিশ্চিত করেছিলাম। তারপরই আসে সেই কালো দিন, যেটি আমাদের সব বিজয়কে ঢেকে দিয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলাম। সহজ কথায়, এই দিনটা আমাদের ছিল না। এ কারণেই আমরা ভালো একটা দলের কাছেই হেরেছি।  এটা ঘটেছিল ঠিক ৩১ মে, ১৯৯৯। এর আট বছর পর জ্যামাইকার কিংস্টনেও একই ভাগ্য মেনে নিতে হয়েছে। এ কথা আর তুলতে চাই না। এখানেই ইতি টানতে চাই।’ 

বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত যতবার ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছে ততবারই হারতে হয়েছে পাকিস্তানকে। আর সব পাকিস্তান সমর্থকের মতো এর ব্যাখা খুঁজে পান না ইনজামামও,‘ এই প্রশ্নের কোন সুদত্তর আমিও খুঁজে পাইনি। বিশ্বকাপ এলেই কেন আমরা বারবার ভারতের কাছে পরাজিত হই। এটা সত্যি, ১৯৯২ বিশ্বকাপে আমাদের দলটি ছিল অনভিজ্ঞ। আর ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের চাপটা আমরা ঠিকঠাক সামলাতে পারিনি। কিন্তু ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ছিল পুরোটাই আলাদা। আমি এখনও বিশ্বাস করি, সেবার ভারতের চেয়ে আমাদের দলটি ছিল বেশি শক্তিশালী। বুঝতে পারি না আমরা কেন ভারতের কাছে হেরে যাই।’

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফাইনালে পরাজয়ের পর দেশে ফিরে কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল পাকিস্তান দলকে ইনজামাম স্মৃতিচারণ করেছেন সে প্রসঙ্গেও, ‘জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে আমরা সেমিফাইনালে উঠেছিলাম। সেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। সাঈদ আনোয়ারের অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে আমরা ফাইনালে পৌঁছালাম। ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়াও। কিন্তু ফাইনালের পর থেকেই আমরা হিরো থেকে ভিলেনে পরিণত হই। দেশে ফেরার পর লোকজন আমাদের দিকে ঢিল ছুরতে শুরু করল। একবারও কেউ ভাবল না আমরা ফাইনাল খেলেছি। শিরোপার এত কাছে এসেও তা ছুঁতে না পারা একজন ক্রিকেটারের জন্য কতটা বেদনাদায়ক সেটা মানুষ বুঝতেই চায়নি। দুঃখজনক ব্যাপার পাকিস্তানে পরাজয় মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি নেই।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!