• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন থেকে কি সরে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট?


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮, ০২:০৮ পিএম
নির্বাচন থেকে কি সরে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট?

ঢাকা : ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কি বিএনপি মাঠে থাকছে না কি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছে তা নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে। দলের ভিতরে-বাইরেও এ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় বিরাজ করছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যেও ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকা না থাকা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ফের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশে প্রচারণায় পিছিয়ে থাকা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরা হলে ইসি তা আমলে নেয়নি অভিযোগে এক পর্যায়ে বৈঠক বর্জন করে ঐক্যফ্রন্ট। এ নিয়েও তৃণমূলে ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরদের মধ্যে ভোটে থাকা না থাকা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ভোটের শেষ দিনের পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায় বিএনপি। ওই দিন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ কী ধরনের হয় তা দেখতে চায় তারা। বিষয়টি দেশি-বিদেশি কূটনীতিবিদদের কাছেও তুলে ধরতে চায় দলটি। তাই নানা প্রতিকূল পরিবেশেও শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার চেষ্টা করবে বিএনপি।

ভোটে থাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, ভোটে না থাকলে দলীয়ভাবে বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিও থাকবে। এ সুযোগ সরকারি দল কাজে লাগাতে পারে। তাছাড়া তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশায় দল ছাড়তে পারে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, সরকার চায় না আমরা ভোটের মাঠে থাকি। তারা চায়, আমরা ভোট বর্জন করি। তাই তফসিল ঘোষণার পর ধানের শীষের প্রার্থীদের সরাসরি আঘাত করা হচ্ছে। তাদেরসহ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোথাও দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের। তারপরও নানা প্রতিকূল পরিবেশে আমরা নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করব। বড় ধরনের কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটলে ভোটে থেকেই যাব।

এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোট ৩০ ডিসেম্বর এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশই নেই। সরকার আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। জেলে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের নির্যাতন চালাচ্ছে। কিন্তু এতে আমরা কি ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাব? এবার আর সরকারকে খালি মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না। ভয়ভীতি দেখিয়ে জনসাধারণের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া সরকার রুখতে পারবে না।

আমরা সমস্ত বিরোধী দল এক হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পরিবর্তনের সংগ্রামে নেমেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন সফল করেই ঘরে ফিরব।’

ইসির বৈঠক বর্জন শেষে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। তাই কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি স্টিয়ারিং কমিটি। আগামীকাল বিকাল ৩টায় আবারও বৈঠক ডাকা হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারকদের। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না।

জানা যায়, গতকালের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকেও নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে কথা বলেন কোন কোন নেতা। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের বক্তব্য শোনেন এবং নির্বাচন কমিশনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন। সারা দেশে কোথায় কোথায় প্রার্থীসহ অন্যদের ওপর হামলা হচ্ছে তারও বর্ণনা দেওয়া হয় বৈঠকে।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, ডা. জাহেদউর রহমান, মমিনুল ইসলাম, কায়সার কামাল, শফিক উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্টিয়ারিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘বৈঠকে আশার কোনো বার্তা শোনা যায়নি। চারদিকে হতাশার খবরই সবাই বলেছেন। সারা দেশে কোথায় কোথায় হামলা-সংঘর্ষ হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেন নেতারা। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত না থাকার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আগামী বৃহস্পতিবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!