• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে সরব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৭, ২০১৮, ০৯:৪৭ এএম
নির্বাচন নিয়ে সরব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা

ঢাকা : একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সরব স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিরা। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞাও তারা মানছেন না। মনোনয়ন ঘোষণার শুরুর দুই দিনে বড় দুই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয় প্রতিনিধিদের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। এতে চরম বিপাকেও পড়েন হেভিওয়েট প্রার্থীখ্যাত অনেকে।

জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সক্রিয়তার কারণে নির্বাচনী ফলাফলও বিপক্ষে চলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

দুইবারের সংসদ সদস্য, এক মেয়াদে প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও দলের মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-১৩ আসন থেকে তার পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। সরকারি ও দলীয় তদন্ত প্রতিবেদনে তৃণমূলের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি উঠে এসেছে বলেও বলা হচ্ছে।

তবে আসনটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (ডিএনসিসি) কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নানক। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের ৭ ওয়ার্ডের তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, একটি জাতীয় পার্টি ও বাকি তিনটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয় পায়।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন নানক। নির্বাচনের দিন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হাসেম হাসুর কর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়। হাসুর কর্মীরা জাহাঙ্গীর কবির নানকের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়।
ডিএনসিসি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে নানকের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলাম রতন। আর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম সেন্টু যিনি গত দুই বছর ধরে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে থাকেন। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবু তাহের খান। তিনি সম্পর্কে এই আসনে মনোনয়ন পাওয়া সাদেক খানের আপন ভাই।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭ কাউন্সিলরের মধ্যে শুধু ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে নানকের ভালো সম্পর্ক ছিল। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও তাদের অসমর্থনের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

এদিকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আরেক আসন (১৩) থেকে নৌকার মাঝি হয়েছেন দুইবারের সংসদ সদস্য সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। খাদ্যমন্ত্রীর বিপক্ষে দলের মনোনয়ন পেতে জোর তদবির চালান কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন আহমেদ। উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে শাহিন আহমেদের সমর্থন ও কামরুল ইসলামের বিরোধিতা করেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল না এমন অভিযোগ তাদের। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে কামরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ায় দ্বন্দ্ব ও অসমর্থনের ক্ষোভ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

জিনজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাকুর হোসেন বলেন, যদি বিএনপি থেকে আমান উল্লাহ আমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় পাওয়া খুবই কঠিন হবে। কেরানীগঞ্জে জনপ্রিয়তায় বিএনপি প্রার্থীর অবস্থান বেশ শক্ত।

তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে খুলনা-৪ আসনে সাবেক ফুটবলার ও ব্যবসায়ী নেতা সালাম মুর্শেদী মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলেরই অবস্থান শক্ত। ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন সাবেক হুইপ মোস্তফা রশিদী সুজা।

 চলতি বছর তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে সেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ‘বিএনপি ঘরানার’ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত সালাম মুর্শেদী। রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে আসনের অধিকাংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সুজা পরিবারের যোগাযোগ ও সম্পর্কের তুলনায় সালাম মুর্শেদী অনেক পিছিয়ে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

রূপসা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক ও উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলায় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের যে শক্ত অবস্থান তা প্রয়াত সুজা সাহেবের বদৌলতেই হয়েছে।

টিএস বাহিরদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এতদিন আমরা জেনে এসেছি, সালাম মুর্শেদী হাওয়া ভবনের লোক। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাকেই এই আসন থেকে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু এখন ঘটনা উল্টো ঘটেছে। এই আসনে বিএনপিরও অবস্থান খাটো করে দেখার উপায় নেই। এখান থেকে যদি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হেলালকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জিতে আসা কঠিন হবে।

রংপুর-১ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজু। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি ২০১১ সালে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরের বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

২০১৪ সালে দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রাজু। এই আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আশরাফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!