• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনি মাঠের লড়াইয়ে উৎসবের আমেজ


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৯, ২০১৮, ০১:১৭ পিএম
নির্বাচনি মাঠের লড়াইয়ে উৎসবের আমেজ

ঢাকা : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠের লড়াই শুরু হয়েছে।

বুধবার (২৮ নভেম্বর) সারাদেশে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে জেলা ও উপজেলাগুলোতে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের প্রার্থীরা ছাড়াও অন্য দলগুলোর প্রার্থীরাও তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে মূল লড়াইটি শুরু হবে ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর থেকেই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ঢাকাসহ সারাদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে বুধবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৯টায় মনোনয়পত্র নেওয়া শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে।

ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম ঢাকা মহাগরীর ১৫টি আসনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ৫ থেকে ৭ জনের বেশি কর্মী-সমর্থক সঙ্গে না আনতে ইসির পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও অনেকেই তা মানছেন না।

এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে শেষ দিনে বুধবা (২৮ নভেম্বর) দেশের কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়পত্র জমা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তার আগে বিএনপির সাইফুল আলম নিরব প্রতিনিধির মাধ্যমে এবং আনোয়ারুজ্জামান নিজে উপস্থিত হয়ে ঢাকা-১২ আসনের জন্য মনোনয়পত্র জমা দেন। বিএনপি এ আসনে নিরবকেই মনোনয়ন দিয়েছে।

ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহারা খাতুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে তিনি ‘শতভাগ আশাবাদী’।

বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক খান এবং বিএনপির আবদুস সালাম মনোনয়পত্র জমা দেন। এ আসনে সালামের সঙ্গে আতাউর রহমান ঢালীকেও মনোনয়নের প্রত্যয়ন দিয়ে রেখেছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে আসলামুল হক ঢাকা-১৪, মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ঢাকা-১৬, একেএম রহমউল্লাহ ঢাকা-১১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

ঢাকা-১০ আসনের বর্তমান সাংসদ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারাদেশে নির্বাচনের উৎসব মুখর ও আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি আশা করি সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ নষ্ট হওয়ার মত কোনো কাজ সরকার করবে না।

বর্তমান এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানককে ডিঙিয়ে ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়ন পাওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘বিগত আন্দোলন সংগ্রামে আমি রাজপথে ছিলাম। এ কারণে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। জনগণ আজ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ, নৌকাকে বিজয়ী করতে জনগণ মাঠে নেমেছে।’

একই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। আমার নির্বাচনী এলাকা মোহাম্মদপুর, আদাবরে আমার আর কোনো কর্মীকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়।’

নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে সালাম বলেন, ‘তিনি যেন মুক্তি পেয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইতে পারেন। আমরাও মানুষের কাছে বলব, আপনার একটি ভোটে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে।’

মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে নৌকার প্রার্থী সাদেক খানের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সালাম বলেন, ‘আমি উনাকে বলেছি, নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থে প্রয়োজনে আমরা এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে যার যার দলের পক্ষে ভোট চাইব।’

প্রায় একমাস ব্যাপী ঢাকায় প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট তাদের প্রার্থী স্ব স্ব জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিতরণ, সাক্ষাৎকার এবং প্রার্থী নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।

ঐক্যফ্রণ্টের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের জন্ম পরবর্তী সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং আন্দোলন সংগ্রামের কারণে মামলা জটিলতার কারণে প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে চূড়ান্তভাবে টিকে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে কে থাকবেন তা বাছাই করা হবে।

একইভাবে কৌশলগত কারণে মহাজোটের শরীক দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে বেশ কিছু নির্বাচনী এলাকায়। শেষ মুহুর্তে এসব আসনেও প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা হবে। ফলে আসল লড়াইটি শুরু হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরেই।

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলের মধ্যে বিদ্রোহ থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিরাজ করছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রধান দু’রাজনৈতিক জোটে এখন মনোনয়নের চ‚ড়ান্ত লড়াই অব্যাহত থাকলেও ভোটের লড়াই এখনও প্রাধান্য পাচ্ছে না।

দুই জোটের প্রার্থীরা স্ব স্ব এলাকার রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এলাকায় কর্মীসভায় মিলিত হচ্ছেন। রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও মহাজোটের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক জানিয়েছেন, তিনি গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বুধবার (২৮ নভেম্বর) কর্মী সভা করেছেন। এলাকার নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করছেন। তিনি আশা করছেন এবার এ আসন থেকে হ্যাট্রিক জয় তুলে আসনটি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেবেন।

ঢাকায় মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও হ্যাট্রিক জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বুধবার ফেনী-১ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোননয়নপত্র জমা দেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রেহানা আক্তার রানু। এই আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে আরো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু। এই আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাসদ নেত্রী শিরিন আক্তার।

ফেনী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপি।

ফেনী-৩ আসনে মহাজোটের পক্ষে মনোননয়নপত্র জমা দেন জাতীয় পার্টির লে. জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। এই আসনে বিএনপির পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি ও দাগনভূঁঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন।
চট্টগ্রাম নগরীর ৬টি আসনসহ বিভিন্ন আসনে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীরা। ফরম জমা দেয়ার জন্য প্রতিটি প্রার্থীর সঙ্গে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন শত শত নেতা-কর্মী।

এদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এসময় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীও ছিলেন।

অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলীয় প্রার্থীরা নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫ জন ও বিএনপির তিন প্রার্থীসহ অন্যরা তাদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জমা দেন।

বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে ডা. আফসারুল আমীন, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে দিদারুল আলম মনোনয়ন জমা দেন।

এর আগে নওফেলসহ প্রার্থীরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসবভবনে একত্রিত হয়ে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন।

অন্যদিকে, বিএনপির তিন প্রার্থী আমির খসরু মাহমদু চৌধুরী, এম মোরশেদ খান ও আবদুল্লাহ আল নোমান তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমদু চৌধুরী বন্দর-পতেঙ্গা-১১, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান চট্টগ্রাম-৮ ও নোমান চট্টগ্রামে-১০ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন।

মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়াই ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। গ্রেফতার-ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বাড়িতে হানা এখনো চলছে।

অন্যদিকে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগী-বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সর্বশেষ তথ্য পর্যন্ত এদের মধ্যে মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, রাউজানে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়ার ড. হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের কাছে তারা মনোনয়নপত্র জমা দেন। চন্দনাইশ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাতকানিয়ায় আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী, বাঁশখালী আসনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বরিশালে মনোনয়নপত্র দাখিল করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরওয়ার বলেছেন, নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হবেন। বরিশাল-১ আসনের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, আওয়ামী লীগের দু:শাসন থেকে মুক্তি পেতে দেশবাসী ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন। প্রার্থীদের সবাই সশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। অনেক প্রার্থী নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বরিশাল-২ আসনে সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল ও সরফুদ্দিন সান্টু তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

লক্ষীপুর-১ আসন থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার জাকের পার্টির গোলাপ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এমএ আউয়াল।

তিনি জানান, তার আসনটি তরিকত ফেডারেশন থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আনোয়ার খানকে মনোনয়ন দেয়ায় তিনি জাকের পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!