• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আগে সম্পন্ন হচ্ছে না ১০ মেগা প্রকল্প


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৫, ২০১৮, ১০:২৯ পিএম
নির্বাচনের আগে সম্পন্ন হচ্ছে না ১০ মেগা প্রকল্প

ঢাকা : এগিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও নির্বাচনের আগে শেষ হচ্ছে না সরকারের নেওয়া ১০ মেগা প্রকল্পের কাজ।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সরকারের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মেট্রোরেলের মূল কাঠামো তৈরির কাজও চলছে। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ ১৫ শতাংশও এগোয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব প্রকল্পের ওপর বিশেষ তদারকির ব্যবস্থাও রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে এসব বড় প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি মানুষের দৃষ্টিগোচরের চেষ্টা করা হয়। পদ্মা সেতুসহ অন্য সব প্রকল্পের কাজ শুরুও করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। এসব প্রকল্পের অগ্রগতির গড়হার মাত্র ১৫ শতাংশ।

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। অগ্রাধিকারযুক্ত বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, কাজের গতিও এসেছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি শিগগিরই নজরে আসবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা সব সময়ই থাকে। বেশির ভাগ সময় পরিকল্পনামাফিক কাজ সন্তোষজনকভাবে হয়তো আগায় না। তবে এটিকে বড় করে দেখার কিছু নাই। কাজ শুরু যখন হয়েছে, শেষও হবে। হয়তো দুদিন আগে অথবা পরে।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্পের বেশির ভাগেরই কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল প্রকল্প) এবং পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

এছাড়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুনধুম পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পেও অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ। বসানো হয়েছে পাঁচটি স্প্যান, যার মাধ্যমে সেতুর ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে (প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার)। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ কাজের উদ্বোধন করেছেন ১৪ অক্টোবর। একইদিন উদ্বোধন করেছেন পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প।

পদ্মা সেতুর পরামর্শক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না। সময় হয়তো কিছুটা বাড়বে। তবে এতে আশাহত হওয়ার কিছু নাই। অত্যন্ত বড় অবকাঠামো এটি।

এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় মূল সেতুর ৭০ শতাংশ ও সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’ মন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পগুলোর একটি মেট্রোরেল প্রকল্প। রাজধানীতে সবচেয়ে দৃশ্যমান উন্নয়ন উদ্যোগ হলো মেট্রোরেল প্রকল্পের। এর আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ হবে। উত্তরা থেকে মিরপুরের বেশ কয়েক জায়গায় মেট্রোরেলের খুঁটির ওপর স্প্যান বসানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি ঘণ্টায় ২২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। রাজধানীবাসীরও এই প্রকল্পটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আছে। কিন্তু প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ এগিয়ে গেলেও আশার সঞ্চার হচ্ছে না।

২০১৯ সালে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলাচল চালু হওয়ার কথা। আর ২০২৪ সালে শেষ হবে পুরো প্রকল্পের কাজ। ২০১২ সালে নেওয়া এই প্রকল্পের প্রথম ছয় বছরে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণে আনোয়ারা এলাকায়। আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (সম্ভাব্য) ব্যয়ের এ টানেলের অ্যালাইনমেন্ট হবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে। বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানাসংলগ্ন ঘাট। মোট নয় হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটির মধ্যে টানেলের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৫ মিটার (উভয় পাশের ৪৭৭ মিটার ওপেন কাট বাদ দিয়ে)।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বড় প্রকল্পের কাজের গড়হার ১৫ শতাংশের বেশি নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হতে সময় লাগায় অগ্রগতি কম হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থের যেন সংকট না হয়। সেজন্য এডিপিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন কাজ দ্রুত এগুবে।’ শিগগিরই এসব প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি নজরে পড়বে বলেও জানান তিনি।

সরকারের ফাস্ট-ট্র্যাক দশটি প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আরেকটি শাখা দোহাজারী থেকে রামু হয়ে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। এক দফা ব্যয় বৃদ্ধির পর এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন।

মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সরকারের আরেকটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র চার হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার প্রায় ১৪ শতাংশ।

পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ পাঁচ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চায়না কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের।

পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের একটি। বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানির এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার কথা ২০১৯ সালে।

সরকার বলছে, পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তিসম্পন্ন করায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে পরিবেশবান্ধব। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় পায়রাসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক হাজার একর জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এই প্রকল্পে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। নয় হাজার মেগাওয়াটের যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করতে যাচ্ছে সরকার তাতে মোট বিনিয়োগ হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালিত হবে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার মাধ্যমে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!