• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় ৩২ পদক্ষেপ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৩, ২০১৯, ০৪:১৯ পিএম
নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় ৩২ পদক্ষেপ

ঢাকা : ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৩২টি পদক্ষেপ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ৯ মে একটি সভা করে মন্ত্রণালয়। ওই সভায় ৩২টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো যানজট মুক্ত রাখা, টার্মিনালগুলোয় শৃঙ্খলা রক্ষায় ভিজিলেন্স টিম গঠন করা, দুর্ঘটনার পর সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, সড়কে অস্থায়ী বা ভাসমান বাজার অপসারণ, মহাসড়কের অপব্যবহার বন্ধ করা, বিকল্প সড়ক ব্যবহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার বন্ধ করা, এক্সেল লোড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, টোল প্লাজার সব বুথ খোলা রাখা, সিএনজি স্টেশন চালু রাখা, ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধ রাখা, জরুরি সার্ভিসগুলো প্রস্তুত রাখা, বিআরটিসির স্পেশাল সার্ভিস চালু করা, ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি, বিনা প্রয়োজনে মহাসড়কে গাড়ি না থামানো, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান বন্ধ রাখা, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন দিনে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ দেওয়া ও খোলা রাখা, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দ্রুত অপসারণের জন্য রেকার ও ক্রেন প্রস্তুত রাখা, বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি না চালানো, টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা, কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম চালু করা, যানজট নিরসনে আবদুল্লাহপুর-গাজীপুর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের গ্যাপ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা, আবদুল্লাহপুর-গাজীপুর চৌরাস্তার দুই পাশে যানবাহন চলাচলের জন্য দুটি লেন করে চার লেন উন্মুক্ত রাখা এবং শিল্প কারখানার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মহাসড়কে পার্কিং করে লোড-অনলোড না করা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রায় ভাঙাচোরা সড়কের জন্য ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের অন্তত সাত দিন আগেই মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করতে মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়ক মেরামত করা চলছে।

ঈদের আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা মানিকগঞ্জ-পটুয়াখালী-আরিচা, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও আবদুল্লাহপুর-গাজীপুর মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। পাশাপাশি ফেরিঘাটগুলোয় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন থাকে। ফেরিসংখ্যা বাড়িয়ে বিষয়টি নিরসনের জন্য পুলিশের বিভাগীয় কমিশনার, হাইওয়ে রেঞ্জ ডিআইজি, র্যাব, জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঈদযাত্রীদের বড় একটি অংশ গার্মেন্টকর্মী। ঈদের আগ মুহূর্তেই অধিকাংশ গার্মেন্ট একসঙ্গে ছুটি দেয়। এ বছর গার্মেন্টগুলো পৃথক পৃথক সময়ে বন্ধ ও খোলার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিজিএমইএকে অনুরোধ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়কে দুর্ঘটনা রোধে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি, নছিমন- করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, থ্রি-হুইলারসহ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগের তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি ও এক্সেল লোড বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সেতুগুলোতে টোল আদায়ে যাতে দীর্ঘ যানজট না হয় সেজন্য সব বুথ খোলা রাখতে হবে। এছাড়া ঈদের আগের চার দিন ও পরের চার দিন ২৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন চালু রাখতে বলা হয়েছে।

সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটি মনিটরিং করবেন।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব লিয়াকত আলী বলেন, ঈদে সাধারণ মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৩২টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এর ফলে সড়কে তেমন ভোগান্তি হবে না।

তিনি বলেন, ঈদের সময় পরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা দেখা দেয়। এই অনিয়ম বন্ধে টার্মিনালগুলোতে ভিজিলেন্স টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক সৃষ্ট যানজট দূর করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, অনভিজ্ঞ চালকরা যাতে যানবাহন না চালায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টার ব্যবহারের জন্যও বলা হয়েছে। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বিমান, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ বাহিনীও দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া যানজটের সময় নারী ও শিশুদের ব্যবহারের সুবিধার্থে সড়ক-মহাসড়কের আশপাশের টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর সচিবালয়ে প্রথম কার্যদিবসে বলেন, আসন্ন ঈদে রাস্তায় ভোগান্তি তেমন হবে না। এ সময় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে জানিয়ে তিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে এবারকার প্রস্তুতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো।

অন্যদিকে ঈদে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে এ কথা জানান মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশেষ রেলের পাশাপাশি বিভিন্ন পথে রাস্তার উন্নয়ন কাজ ঈদের আগেই শেষ হওয়ায় যানজট ও দুর্ভোগ কম হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!