• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
যৌথ চুক্তি অমান্য করছে বিএসএফ

নির্বিচারে মারছে বাংলাদেশিদের


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৯, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম
নির্বিচারে মারছে বাংলাদেশিদের

ঢাকা : সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলি ও নির্যাতনে বাংলাদেশিরাই বেশি হত্যার শিকার হচ্ছে। পক্ষান্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে ধরা পড়ার পর ভারতীয় নাগরিকদের হত্যা না করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় বিজিবি।

তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিএসএফ বাংলাদেশের ৩৩ জন নাগরিককে হত্যা করেছে।

বিজিবি-বিএসএফের যৌথ চুক্তি অমান্য করে বিএসএফ সদস্যরা নির্বিচারে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএসএফ সদস্যরা নীতিমালা না মেনে হত্যা, নির্যাতনসহ অমানবিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। আর এতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সীমান্তে হত্যা কেন বন্ধ হচ্ছে না জানতে চাইলে বিজিবির রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসএফের বক্তব্য হচ্ছে, কেউ কাঁটাতারের বেড়া কাটতে গেলে তারা ফায়ার করে। ফায়ার না করলে তাদের বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

দ্বিতীয়ত, কেউ তাদের আক্রমণ করলে তারা ফায়ার করে। গরু পাচারের সময়ও যদি কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, তখন তারা ফায়ার করে।

এছাড়া সাধারণত তারা ফায়ার ওপেন করে না। আমাদের লোকজন যদি সহনশীল হয়, তারা যদি বিএসএফের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ না করে তাহলে তারা ফায়ার করতে চায় না।’

তবে এক্ষেত্রে বিজিবি অনেকটা সহনশীল। তারা সীমান্ত আইন লঙ্ঘনকারী ভারতীয়দের হত্যার পরিবর্তে তাদের আটক করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়।

বিজিবির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বর্তমানে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। এটি অব্যাহত থাকলে সীমান্ত হত্যা কমে যাবে। জনগণের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছেন ৯৬৯ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১৩ সালে ২৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন এবং ২০১৭ সালে ২১ জন ও ২০১৮ সালে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন।

সীমান্তে হত্যাসংক্রান্ত সম্প্রতি বিজিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশের দরিদ্র নাগরিকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি চিকিৎসাসেবা, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া এবং কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য কেনা।

শুধু সীমান্ত অতিক্রম নয়, শূন্যরেখার কাছে ভুলক্রমে চলে যাওয়ার কারণেও বাংলাদেশের নাগরিকরা হত্যার শিকার হয়েছেন। সে প্রমাণ বিজিবির কাছে আছে। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হত্যার শিকার হওয়ায় অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহসীন রেজা বলেন, তুলনামূলকভাবে সীমান্তে হত্যা কমে আসছে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভারতীয় নাগরিকদের সাধারণত হত্যা করে না। যৌথ চুক্তির নিয়ম অনযায়ী অবৈধ পথে যারা সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে তাদের আটক করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। আবার কেউ যদি ফৌজদারি অপরাধে যুক্ত হয় সে ক্ষেত্রে আটকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সীমান্তবর্তী একাধিক বিভিন্ন জেলার একাধিক বলেছেন, বিএসএফের মাঠপর্যায়ে কর্মরত সদস্যরা বিজবি-বিএসএফের মধ্যকার যৌথ চুক্তির ধার ধারে না। তারা বাংলাদেশের কেউ ভুল করেও জিরো পয়েন্টে গেলে তাদের নির্বিচারে হত্যা করে।

শুধু তাই নয়, বিএসএফ প্রায়ই জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে জুলুম নির্যাতন করে, তারা রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে গুলিও চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!