• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যায় জড়িত আ’লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে পোস্টারিং!


জেলা প্রতিনিধি জুন ১৮, ২০১৯, ০৭:৩৬ পিএম
নুসরাত হত্যায় জড়িত আ’লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে পোস্টারিং!

ফেনী: মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় কারাবন্দি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের মুক্তি দাবি করে সোনাগাজীতে ব্যাপক পোস্টারিং করা হয়েছে।

উপজেলার আনাচে-কানাচে তার মুক্তির দাবিতে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রচারে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ, সব সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন- এই পোস্টারিংয়ের সঙ্গে তাদের দলীয় কোনো সম্পর্ক নাই।

সোমবার (১৭ জুন) রাত থেকে উপজেলার আনাচে-কানাচে প্রচুর পরিমাণে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি চাই। উক্ত পোস্টারগুলো উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়েও সাঁটানো হয়েছে।

তার মুক্তির দাবিতে পোস্টারিংয়ের ব্যপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম জানান, তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করে মুক্তি চেয়ে পোস্টারিং করা ঠিক হয়নি। যারা পোস্টারিং করেছেন, তাদের উচিত ছিল- তাকে সাবেক সভাপতি লেখা। আমার জানা মতে, তার মুক্তির দাবিতে ছাপানো পোস্টারের সঙ্গে জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নাই।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক জানান, এই পোস্টারিংয়ের সঙ্গে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নাই।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, পোস্টারিংয়ের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নাই।

সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরন ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ভূট্টো জানান, পোস্টারিংয়ের সঙ্গে যুবলীগের কেউ জড়িত নাই। সাংগঠনিকভাবে কাউকে এসব পোস্টারিংয়ের দায়িত্বও দেয়া হয়নি।

নুসরাত হত্যা মামলায় গত ২৯ মে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদানের পর ৩০ মে জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন একটি মামলায় কারাগারে থাকায় অধ্যাপক মফিজুল হককে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে একই মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন তার মা শিরিন আক্তার।

ভয়ভীতি দেখানোর পরেও মামলাটি তুলে না নেয়ায় গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুসারীরা নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।

এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালত।

২৯ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে মামলার এজাহারভুক্ত আট জনসহ ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

১০ জুন আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০ জুন চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেন।

বিভিন্ন সময়ে এ মামলায় গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিলসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ২৯ মে চার্জশিটভুক্ত কারাবন্দি আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, প্রভাষক আবসার উদ্দিন, মো. শামিম, ইফতেখার উদ্দিন, নূর উদ্দিন জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১৬ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি ফেনী কারাগারে রয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!