• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নুসাদোয়া ধনীদের জন্য আলাদা বিচ


মুহাম্মদ সেলিম হক মার্চ ৯, ২০১৯, ০৪:৫৪ পিএম
নুসাদোয়া ধনীদের জন্য আলাদা বিচ

ছবি : সোনালীনিউজ

ঢাকা : যেখানে প্রকৃতি আর মানুষের গড়া সৌন্দর্য্যরূপ এক কাতারে মিশে। সেখানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভিড় জমে। আল্লাহ প্রদত্ত সাগর আর সমুদ্র সৈকত এক পাশে অন্য পাশে পাহাড় পর্বত এ যেন সবুজ প্রকৃতি ও নীল জলরাশির মায়া খেলা ইন্দোনেশিয়ায়।

পাঠকের কাছে হাজির হলাম ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের চতুর্থ পর্ব নিয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্র ঘুরে অনেক মজার তথ্য ও ঘটনা আমার ঝুঁলিতে। যা ক্রমান্বয়ে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।

বালির পথে ঘাটে আজ টানা চার দিন । ক্লান্ত শরীর তবে মন ছিল চাঙ্গা ভাব। বেড়ানোর ইচ্ছায় কোনো কমতি ছিল না। তবে ওখানকার পরিবেশ, একেক সময় একেক জায়গায় বেড়ানো আর সময়ের আবর্তনে ঘুমের একটু ব্যাঘাত ঘটেছে। টানা কয়েক দিনে বালির পথঘাট, আশেপাশ এরই মধ্যে চেনাজানা হয়েছে অনেকটা।

চারদিন পর ভ্রমণের পর খরচ কমানোর ভাবনায় আমার সফর সঙ্গী সমীর বাবুকে নিয়ে শলা-পরামর্শ করলাম। কিভাবে কি করতে হয়। এমনকি অল্প টাকা খরচে কিভাবে অনেক দর্শনীয় জায়গা দেখা যায়!

হোটেল থেকে বের হয়ে এবার রাস্তা থেকে ভাড়া নিলাম গাড়ি। অনেক দরাদরি করে ১ লাখ রুপিয়া কমে নুসাদোয়া আর পেনডোয়া বিচ দেখার জন্য চুক্তি করলাম। এবার ৬ ঘণ্টার সময়ের জন্য নিলেন এক লাখ রুপিয়া। ড্রাইভার একটা সাদা কাগজে এগ্রিমেন্ট এ সাইনও নিল। কেউ যাতে কথার বরখেলাপ না করতে পারে। আমাদের জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। কেন না বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ সিস্টেম রয়েছে কিনা জানি না।

গাড়ি চলতে চলতে ড্রাইভারের কাছে জানাতে চাইলাম। সৌদি আরবের বাদশা সালমান বালির সফরের কথা। বাদশা সালমানের বালির সফরের শুরু হতে শেষ। সবই সে বলল আমরা ও জেনে নিলাম।

ড্রাইভার জানালো বছর খানিক আগে সৌদি কিং বালিতে সফরে আসেন। পুরো শহর তখন নিয়ন্ত্রণে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। জাকার্তা থেকে আসে নিরাপত্তা কর্মীরা। পুরা শহরের অলিগলি তখন নিরাপত্তার চাদরে ডাকা ছিল। নুসাদোয়া তিনটা বিচের সঙ্গে ফাইভ স্টার হোটেল মোটেলও বুকিং ছিল সব।

কথা শেষে প্রকৃতির দিকে খেয়াল হলো। আজকের সকালের আকাশটা ছিল একেবারে গম্ভীর। মেঘের আনাঘোনা চলছে আকাশে। বৃষ্টি হবে এমন ভাব তবে ভারি হবে না। এমনটা অভয় দিলেন ড্রাইভার। ওখানকার আবহাওয়াটা নাকি এ রকম থাকে প্রায়। টাকা কম দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে একটু বিড়ম্বনায়ও পড়লাম।

ড্রাইভার কোনো একটা বিচে নামিয়ে দিয়ে বলল এটা নুসাদোয়া বিচ। একটু খড়কা লাগল। এখানে সৌদি কিং আসলো! ১০ মিনিটে হাফিয়ে পড়লাম। প্যারাসুট আর বোটে ভ্রমণের সুযোগ ছিল। দামের কারণে বেড়াতে মন চাইল না। জনপ্রতি পড়বে ৫ লাখ রুপিয়া। ভাবলাম কম টাকায় কক্সবাজার শহরে এর চেয়ে ভালো উপভোগ করা হবে।

ড্রাইভারকে বললাম, এটা ডার্টি বিচ। এটা আমাদের পছন্দ হয়নি। আমাদের অন্য বিচে নিতে। সে বলল এখানে নুসাদোয়া বিচ দেখা শেষ। অন্যটিতে চলেন আমি তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লাম। আমি এখানে কয়েক ঘণ্টা থাকবো। যেহেতু আমার সময় আছে। এভাবে ৫ মিনিটের মতো চলল যুক্তিতর্ক। তাকে বললাম ১ লাখ রুপিয়া নিয়ে চলে যান। আমি অন্য গাড়িতে করে যাব।

পরে ড্রাইভার কি যেন ভেবে বাধ্য হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ভিআইপি রোডে প্রবেশ করল। গাড়ি চলছে অন্য বিচে ট্যুরিস্টদের টিকেট কাটতে হলো। পরে বুঝতে সহজ হলো ড্রাইভার ৮০ হাজার রুপিয়া বাঁচানোর কৌশলে আমাদেরকে বোকা বানিয়ে ছেঁড়ে দিতে চেয়েছিল। হয়তো টাকার লোভ সবখানে।

এ জন্য হোটেলের গাড়ি ভাড়া কয়েক টাকা বেশি হলেও ভালো বলল সমীর বাবু। বাংলা বুঝতে না পেরে ড্রাইভার মশায় ফেল ফেল করে অভিমানের দৃষ্টিতে থাকিয়ে রইল। জানা যায়, নুসাদোয়াকে বলা হয় ধনীদের বিচ।

সবুজের সঙ্গে কংক্রিটের ভাস্কর্য্যে নিখুঁত গাথুঁনি সৌন্দর্যময় যেন অপরূপ। অপূর্ব ছিল ঝরনার ফোয়ারা গুলি। শব্দহীন গাড়ি চলা আর শত শত ট্যুরিস্টদের হাসির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল প্রকৃতির উদারতায়।

প্রায় ৪ কিলোমিটার মতো নুসাদোয়া বিচের সৌন্দর্যময় ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। গুগলে তথ্য খুঁজে জানলাম এখানে সব ফাইভ স্টার হোটেল এর সর্বনিম্ন রেইট বাংলার মুদ্রায় ৩৮ হাজার টাকা। হোটেলগুলোর নিমার্ণশৈলী অসাধারণ। যেন প্রকৃতি থেকে একটু এগিয়ে বা নিচে।

আগেই বলছি বালিতে অস্ট্রেলিয়ান ট্যুরিস্ট একটু বেশি। নুসাদোয়া বিচে এরা খেলে সাফারিং। সাগরের ঢেউ এর সঙ্গে দুরে চলে যাওয়া। ভয়কে একেবারে নখের ডগায় রেখে জীবনের সেরা উপভোগ তারাই করছে।

সাদা বালি। স্বচ্ছ নীল পানির সঙ্গে নীলের আবরণে সারি সারি গাছ। উঁচু নয় তেমন আবার বেশ বেটে ও নয়। কেবল চেয়ে থাকতে মন চায়। যেন চোখ ফেরানোর সুযোগটা দিবে না প্রকৃতির সাঁজানো এ সংসার। কয়েক ঘণ্টা এখানে চলে গেল এভাবে ঢেরও পেলাম না।

গাড়িতে এসেই ড্রাইভারকে আনন্দ সূচক আঙুল দেখিয়ে বললাম ভেরি নাইস। তার ও চোখে মুখে আমাদের সন্তুষ্টিতে খুশি খুশি ভাব। আগের ঝগড়া কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে।

এবার গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলতে চলতে ড্রাইভার জানাচ্ছেন অনেক তথ্য। আকাবাঁকা পথে মিলছে শহরের এতিহ্যের কিছু চিহ্ন। বালি ভ্রমণের ক্লান্তিতে নিজের গলাকে সতেজ রাখতে ডাব খেতাম। ২০ হাজার রুপিয়ায় একটি ডাব। সারাদিনের আহার শেষ। আমি আর সমীর বাবু ডাবের পানি খেতে কাপর্ণ্য করতাম না। রোজ রোজ ভ্রমণে এটা চলতো। দরাদরি করলে ১৫ হাজারে মিলে।

দুপুরবেলা নুসাদোয়া শেষে পেনডোয়া বিচে যাওয়ার পথে একটি বিষয় দেখে খুব অদ্ভুত লাগল। পাচঁটি ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রার্থানা ঘর এক জায়গায়। শুরুতে হিন্দুদের মন্দির, তারপর বৌদ্ধদের প্যাগোডা, খ্রিস্টানদের গির্জা, ক্যাথলিকদের চার্চ, সবর্শেষ মুসলিমদের মসজিদ। বালিতে আসার পর প্রথম মসজিদ দেখাতে যোহরের নামায পড়ে নিলাম।

মাজাহাব ভিন্ন হওয়াতে নামাযের ভিন্নতা দেখতে হলো। এখানে মহিলাদের জন্য আলাদা নামায পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যোহরের সময় অনেক মহিলাকে মসজিদে দেখলাম। সফরে থাকাতে যোহর ও আসর এর নামাজ এক সঙ্গে পড়লাম।

পেনডোয়া বিচের পথে যেতে যেতে চোখে পড়লো ট্যুরিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। বিশাল আয়তন। ঐতিহ্য আর মূর্তির কারুকার্য বিশ্ববিদ্যালয় রূপকে আরও বাড়িয়ে দিল কয়েকগুণ। বালির হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা রপ্ত করছে ট্যুরিস্টদের মন জয় করার কৌশল। এ জন্য বোধহয় ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর এক নাম্বার উদারতার দেশ।

দুপুর বেলার শেষ দিকে পৌঁছালাম পেনডোয়া বিচে। প্রবেশ পথে পাচঁটি বড় বড় দেবতার মূর্তির ছবি। এরা নাকি পাঁচ ভাই। ভারত থেকে আসলো ধর্মের প্রচারণায়। পাহাড়ের পাদ দেশে এ বিচের সৌন্দর্য যেন রূপকথা গল্পের মতো। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পেনডোয়া বিচ। অনেকটা কক্সবাজার এর মতো। পর্যটকদের জন্য সারি সারি বসার ছাতা। হেলিয়ে সাগর দেখা আগের বিচগুলোর চেয়ে ভালো মনে হলো।

সারাদিন বসলে দিতে হবে ৫০ হাজার রুপিয়া। সঙ্গে হাত বাড়লে পাবেন সী-ফুডের সমারোহ সাজানো নানান খাবার। পাহাড় আর সাগর এক সঙ্গে। কক্সবাজার বিচে পুরা মাস থাকলেও টাকা নেয় না।

প্যানডোয়া বিচকে করেছে অন্যদের তুলনায় একটু ব্যতিক্রম। বেলা শেষে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলে সাগরের গর্জনে সাঁ সাঁ শব্দ। প্রকৃতি যেন সবগুলো নিজ হাতে যত্ন সহকারে তৈরি করে দিয়েছে। বালির সাদাবালি আর স্বচ্ছ জলের স্পর্শ যেন পযর্টকদের নাড়া দেয়। হৃদয়ে লুকায়িত অনুভূতিগুলো শিহরিত হয়।
বার বার দেখতে মন চাই কিন্তু সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান। সময় বড় নিষ্ঠুর এ কারণে ডাক পড়ে ফিরে যাওয়ার।

চলবে...

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!