• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৯, ২০১৯, ০২:২৫ পিএম
নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তা

ঢাকা : উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর বার্তা পাঠাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ও দলের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে কোনো অবস্থাতেই যেন দলীয় কোন্দলের প্রকাশ না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময় ঘটা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য এবার আগেভাগেই দল সতর্ক। উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে জেলা ও উপজেলায় বর্ধিত সভা ডাকতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধের কারণে উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে যেন খেসারত দিতে না হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলীয় কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের সুপারিশ ছাড়া এবারো কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। নিজেদের উপজেলার প্রার্থীর নাম বাছাই করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কাছে পাঠাতে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে জেলা ও উপজেলার দলীয় কমিটিগুলোকে। প্রতি উপজেলা থেকে জনপ্রিয় ও যোগ্য অন্তত তিনজন প্রার্থীর নাম চাওয়া হতে পারে তৃণমূলের কাছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল ঘোষণার পর তৃণমূল থেকে আসা নাম থেকে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে। দুটি কমিটির সম্মিলিত সিদ্ধান্তের পর প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলের মনোনয়ন বোর্ড। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগের কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন। সংসদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলার এ ধারাবাহিকতা উপজেলা নির্বাচনেও ধরে রাখার বার্তা দল থেকে দেওয়া হবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েক নেতার দেওয়া তথ্য মতে, ভোটের মাঠের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি আর বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটি এ সিদ্ধান্তের কথা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। শেষ পর্যন্ত দলটি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়তে পারে।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগের টিকেটে সহজেই জয়ী হওয়া সম্ভব বলে অনেকে মনে করতে পারেন। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক দলের নেতাদেরই তখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা ও দলের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই নির্বাচনের আগেই দলের শীর্ষ পর্যায় কৌশল ঠিক করে রাখছে।

সাধারণত দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে নতুন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি উন্মুক্তও করে দেওয়া হতে পারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে ও বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দলের কর্মকৌশলও শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।

দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মনে করেন, ‘গণতন্ত্রকে গুরুত্ব দিলে বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে নিজে থেকেই আসবে। জাতীয় নির্বাচনে যেমন তারা এসেছে, সেভাবেই আসবে। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে ডেকে আনা হয়নি, উপজেলা নির্বাচনেও হবে না।’

সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল নিরসনে কঠোর উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের অনেক এলাকায় দলের প্রার্থীর সঙ্গে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে উপজেলা চেয়ারম্যানদের।

গত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যানও সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিরোধ মাঠেও গড়ায়।

উপজেলা চেয়ারম্যানরা সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। তবু অনেক জেলা ও উপজেলায় বিরোধ থামেনি।

অন্যদিকে প্রথমবারের মতো সারা দেশের মোট ৪৯৩টি উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট নেওয়ার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। এ জন্য দলের মনোনয়ন পেতে সারা দেশের জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

দলটির কয়েক নেতা জানান, তারা অনেক আগে থেকেই উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জাতীয় সংসদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে জোর ভূমিকা পালন করেছেন বিভিন্ন সংসদীয় আসনে। সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলার নির্বাচনেও ভূমিধস বিজয়ের প্রত্যাশায় মাঠে নেমে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সব উপজেলায় আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে পরামর্শ নেব যে, তারা কাকে উপযুক্ত প্রার্থী মনে করে। উপজেলা ও জেলা কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দেবে।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সব উপজেলা, থানা কমিটি ও ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে যৌথ সভা হবে। সেই সভায় প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব, সমর্থনকারী ও একাধিক প্রার্থীদের সেখানে গোপন ভোটের মাধ্যমে তিনজনের নাম পাঠানোর নির্দেশ থাকবে। তিনজনের মধ্য থেকেই আমরা মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনা করব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!